সাব্বির ফকির, খুলনাঃ করোনার মহামারিতে খুলনাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার খামার প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। করোনার পরিস্থিতির কারণে কাঁকড়া রফতানি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের খামারিরা। অব্যাহত লোকসানে ইতোমধ্যে ছোট-বড় বেশ কিছু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আর অন্য খামারগুলো এখন টিকিয়ে রাখাই দায়।
রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। করোনা অতিমারির কারণে গত বছরের মার্চে চীনে কাঁকড়া রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশের বাজারেও কমে যায় দাম। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চলতি বছর আরও অনেক খামারির কাঁকড়া চাষ বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে অনেক খামারি ব্যাংক ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনও রকম খামার বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু দেশের বাজারে দাম না পাওয়ায় কাঁকড়া বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা। ফলে দিনের পর দিন বাড়ছে ঋণের বোঝা। তবে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৬৩ জন কাঁকড়া চাষিকে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আর খামারিরা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত খামারির তুলনায় সরকারের এই সহায়তা অপ্রতুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি হিসাবে মতে প্রায় দুই হাজারের অধিক কাঁকড়া খামার রয়েছে। এসব খামারের সঙ্গে যুক্ত চাষিদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। রফতানি বন্ধ থাকায় খামারে চাষ করা অধিকাংশ কাঁকড়া মরে যাচ্ছে।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম (রাঙ্গা প্রভাত) কে জানায়, ‘বর্তমানে কাঁকড়া চাষ বন্ধ করেও খামারিরা ঋণের দায়ে ঘরে থাকতে পারছেন না। আর যারা লোকসান টেনেও কাঁকড়া চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের অবস্থাও খারাপ। এ অবস্থায় চীনে সরাসরি কাঁকড়া রফতানি চালু করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিনা সুদে ঋণ দিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
রফতানিযোগ্য কাঁকড়া সাধারণত পাঁচটি গ্রেডে বিক্রয় হয়। বর্তমানে প্রত্যেক গ্রেডের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে কমেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে ২০০ গ্রাম (ফিমেল) ওজনের কাঁকড়ার কেজি ছিল ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা, ওই কাঁকড়া বর্তমানে ৮০০ টাকা। ১৮০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ১ হাজার টাকা, তা বর্তমানে ৬০০ টাকা। ১৫০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ৮০০ টাকা, এখন তা ৪০০ টাকা। ১০০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়া ছিল ৬০০ টাকা, কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এমন দামে কাঁকড়া বিক্রি করে চাষিদের যেমন খরচ ওঠে না, তেমনি ব্যবসায়ীদেরও লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
পাইকগাছা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন পিন্টু বলেন, ‘কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। দেনার দায়ে শতাধিক ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়েছেন। আশা করি তারা বিনা সুদে অর্থ পেলে পুনরায় কাঁকড়া চাষ করতে আগ্রহী হবেন তারা।