বিশেষ প্রতিনিধি।। ঘটনার একদিন পর মা নিজেই স্বীকার করলেন, আত্মহত্যা করেনি তার মেয়ে, তিনি নিজেই পেছন দিক থেকে জাপটে ধরে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করেছেন। বছর পঁচিশের তরুণী মাহবুবা আক্তার মেরী তখন নামাজরত অবস্থায় ছিলেন। তাই ঘটনার আগে মায়ের ফন্দি কিছুই বুঝতে পারেনি। গতকাল শনিবার দুপুরে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন জাহানারা বেগম। রংপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪-এর বিচারক আল-মেহেবব তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুক হাজিপুর গাছুয়াপাড়ায় গত শুক্রবার নিজের ঘরে খুন হন মাহবুবা আক্তার মেরী। প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে এটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হলেও সন্দেহ হয় পুলিশের। তাই ঘটনাস্থল থেকে মা জাহানারা বেগম ও বাবা মেনহাজুল হককে আটক করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, গলায় কাটার ধরন এবং পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয় থেকে এটি আত্মহত্যা মনে হয়নি। তাই নিহতের বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে জাহানারা বেগম প্রকৃত ঘটনাটি খুলে বলেন এবং একাই মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেন।
নিজের মেয়েকে হত্যার কারণ হিসেবে জাহানারা জানিয়েছেন, মেরী মৃগীরোগে আক্রান্ত ছিলেন। এ কারণে তার বিয়ে হচ্ছিল না। তার চিকিৎসাতেও প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। এসব কারণে মেরীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের প্রায় সময়ই ঝগড়াঝাটি হতো। শুক্রবারও মা ও মেয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন জাহানারা এবং আসরের নামাজ পড়ার সময় পেছন দিক থেকে জাপটে ধরে ধারালো ছুরি চালান নিজের মেয়ের গলায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মেরীর।
এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ওই ঘটনাটি ঘটলেও পরিবারের লোকজন তাদের কাউকে কিছুই জানায়নি। সন্ধ্যার অনেক পর আত্মীয়স্বজনরা ওই বাড়িতে এসে কান্নাকাটি শুরু করলে প্রতিবেশীরা তখন বুঝতে পারেন, কেউ মারা গেছে। আশপাশের লোকজন তখন ছুটে গেলে মৃগীরোগের কারণে মেরী আত্মহত্যা করেছে বলে জানায় পরিবারটি। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এর পর সিআইডির ক্রাইমসিন টিমের সদস্যরাও গিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে।
বদরগঞ্জ থানার পরিদর্শক হাবিবুর রহমান এটিকে রহস্যজনক দাবি করেছিলেন তখনই। গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিক পোচের দাগ, পরিবারের পক্ষ থেকে যথাসময়ে থানায় খবর না দেওয়াসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে পারেনি পুলিশ। যদিও মেয়ের মা জাহানারা বেগম বলেছিলেন, চিৎকার শুনে ঘরে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের গলা দিয়ে রক্ত ছুটছে এবং ছটফট করতে করতে একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। জাহানারার দাবি ছিল, মৃগীরোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেন মেরী।
স্থানীয়রা জানান, মেরী স্থানীয় ওয়ারেসিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এক সময় পড়ালেখা করলেও অসুস্থতার কারণে তা চালিয়ে যেতে পারেননি। রক্ষণশীল ওই পরিবারটির সঙ্গে প্রতিবেশীদেরও তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবে মেরী শান্ত স্বভাবের ছিল বলে জানিয়েছেন আশপাশের লোকজন। তার বাবা মেনহাজুল হক রামনাথপুর বিইউ দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট। ঘটনার সময় অবশ্য তিনি বাড়িতে ছিলেন না। এ কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার। এ ঘটনায় নিহত মেরীর চাচা সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।