১০ ব্যাংকের ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা
রাঙা প্রভাত ডেস্ক।। করোনার সুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোতে ঋণ খেলাপির পরিমাণ কম দেখিয়েছে। এ সময়ে নতুন করে খেলাপি করতে না পারার কারণে ব্যাংকগুলোর আদায় হয়নি। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখা এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক।

করোনার কারণে ব্যাংকগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধরে রাখতে গত বছর থেকে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই এ বছর যেসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে আছে সেসব ব্যাংক লভ্যাংশও দিতে পারবে না।

মূলধন ঘাটতি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার বহির্প্রকাশ। ফলে শুধু ব্যাংকিং খাতে নয়, পুরো অর্থনীতিতেই বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা থাকে। বিদেশি বিনিয়োগেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ঘাটতির মুখে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বিদেশি ব্যাংকগুলো লেনদেন করতে আস্থার সংকট দেখা দেয়। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে গ্যারান্টি হিসেবে তাদের বাড়তি ফি দিতে হয়, যার প্রভাবে ব্যবসা ব্যয় বেড়ে যায়। বাজেট থেকে বারবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও মূলধন ঘাটতি বেড়েই চলেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর। গত কয়েক বছরে বাজেট থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে সরকারি ব্যাংকগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ঘুরেফিরে সরকারি ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি থাকছে। এসব ব্যাংকে জনগণের করের টাকায় বারবার মূলধন জোগান দেওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ৭টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ঘাটতি জনতা ব্যাংকের। সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ডিসেম্বর শেষে ৩ হাজার ২ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে। বেসিকের ঘাটতি ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ও রূপালী ব্যাংকে ঘাটতি রয়েছে ৬৭২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ও পদ্মা ব্যাংকে ৩১০ কোটি টাকা ঘাটতি।
ব্যাংকগুলোর সম্পদ (ঋণ) বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বাড়ে। ঋণের মান অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ নির্ণয় করা হয়। যে ব্যাংকের গুণমানসম্পন্ন ঋণ বেশি তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ কম। খারাপ ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো যেন পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকটে না পড়ে এ জন্য আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। যে ব্যাংকের মূলধন যত কম তার সংকট মোকাবিলার সামর্থ্যও তত কম। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্যাসেল-৩ অনুসারে মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। পাশাপাশি অনাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো ঝুঁকির ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় আরো ১ দশমিক ২৫ শতাংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়।

Share.
Exit mobile version