রাঙা প্রভাত ডেস্ক : লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার ফুলছড়িতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে তিস্তার চরাঞ্চলের হাজার হাজার বসতবাড়িসহ জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বেশি ছিল কালীগঞ্জের কাকিনায়। এ সময় ওই এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমিসহ গাছপালা ভেঙে পড়ে লোকালয়ের বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।এদিকে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ে গম, মসুর, ভুট্টা, কলা, শাকসবজি ও ধানক্ষেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের তিস্তা চরাঞ্চলে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে থেমে থেমে এ শিলাবৃষ্টিতে এমন ক্ষয়-ক্ষতি হয়। লালমনিরহাট সদরসহ ৫ উপজেলায় হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে তিস্তা চরাঞ্চলের হাজার হাজার বসতবাড়িসহ জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে শিলা বৃষ্টির পরিমাপ বেশি ছিল কালীগঞ্জের কাকিনায়। এ সময় ওই এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমিসহ গাছপালা ভেঙে পড়ে লোকালয়ের বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যেই ধানের চারা লাগানো হয়েছে। এমনকি ভুট্টার মোচা বের হয়েছে। এমন সময় এ শিলাখন্ডের আঘাতে ধানসহ ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সদ্য লাগানো সবুজ শাকসবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিলাবৃষ্টির কারণে উপজেলার হাজার হাজার বসত-বাড়ি ও ক্ষেতের ভুট্টা, তামাক ও ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ভয়াবহ এ শিলাবৃষ্টিতে বসত বাড়িসহ বিভিন্ন ফসলী ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তারা তালিকা দিলে সহযোগিতা করা হবে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ে গম, মসুর, ভুট্টা, কলা, শাকসবজি ও ধানক্ষেত মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে কৃষকদের ালমনিরহাট ও ফুলছড়িতে ঝড় ও
রকারিভাবে প্রণোদনা ও পুনবার্সনের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।করোনাভাইরাস মহামারী থেকে বাঁচতে জারি করা কঠিন বিধি নিষেধ (লকডাউন) এর প্রথম দিন গাইবান্ধায় মৌসুমের প্রথম প্রবল বেগে ধেয়ে আসা কালবৈশাখী ঝড়ে জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৫০ হেক্টর বোরো ফসল ও ৬৫০ হেক্টর ভুট্টাক্ষেত আক্রান্ত হয়। এছাড়া শাকসবজি, গম, মসুরডাল ও ধানক্ষেত আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আম ও লিচুর মুকুল ঝরে পড়েছে। কম খরচে ভাল ফলন ও লাভের আশায় ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর চরাঞ্চলসহ জেলার অনাবাদি জমিতে ব্যাপক হারে এবার চাষ হয়েছে হাইব্রিড ভুট্টা। ফলন ভাল হলেও কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙেছে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে। গত ৪ এপ্রিল দুপুর থেকে শুরু হয় আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। পরে শুরু হয় তীব্র বাতাস, লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি, গাছপালা, আবাদি জমি।
প্রতি বছর চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় শতশত বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ৪০ মণ ভুট্টা। খরচ কম, লাভ বেশি। তাই এ অঞ্চলের চাষিরা ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ করে থাকে। কিন্তু এ বছর কালবৈশাখীর থাবায় কৃষকদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে।ভুট্টা চাষে লাভের পরিবর্তে খরচের টাকাই তোলা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের। হঠাৎ ঝড়ে স্বপ্নবাজ কৃষকদের বুক ভরা কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। ভুট্টা চাষী নাহিদ বলেন, আমার ৭ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় লাখ টাকা। ধার দেনা করে আবাদ করেছি এখন কিভাবে এই টাকা পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। ভুট্টা ছাড়াও বিভিন্ন তরিতরকারিসহ অনেক ফসল তছনছ হয়েছে। পূর্ব কেতকির হাট গ্রামের ভুট্টাচাষি সাদা মিয়া বলেন, আমারা কিভাবে বাঁচব ভেবে পাচ্ছি না। এখন ঘরবাড়ি রেখে পালাতে হবে; নইলে পাওনাদার এসে টাকার চাপ দেবে। কৃষক সাজু মিয়া বলেন, আমার ৫ বিঘা জমির ভুট্টা একবারে নষ্ট হয়ে গেছে। কি করে সংসার চালাবো। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কি খাবো। আমরা চরাঞ্চলে বসবাস করি আমাদের দু:খ দেখার কেউ নেই। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা কাওছার মিশু বলেন, প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারিভাবে যতটুকু করার দরকার, বিশেষ করে আউশের প্রণোদনা ও পুনবার্সনে যা যা করা দরকার আমরা কৃষকের জন্য করবো।