অনলাইন ডেস্ক।। রাস্তায় নবজাতককে কান্না করতে দেখে চমকে ওঠেন আল আমিন। রাত তখন ১২ টা।জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেন। ফোন পেয়ে পুলিশ দ্রুত এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে নবজাতককে। বেঁচে যায় নবজাতকটি। নবজাতকটি সুস্থ আছে। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, আল আমিন সময়মতো দেখতে না পেলে কুকুরের খাবারে পরিণত হতো অথবা রাতের ঠা-ায় শিশুটির মৃত্যু হতো। আমরা সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে নবজাতকটিকে কে বা কারা রেখে গেছে তা খোঁজার চেষ্টা করছি।

গত শুক্রবার গভীররাতে নগরীর চকবাজার থানাধীন দামপাড়ার ওয়াসা মোড় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিবিএ ফ্যাকাল্টির সামনের ফুটপাত থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়।

৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে আমার ছোট ভাই তার বাসার নিচে রাস্তার পাশে শিশুটিকে দেখতে পেয়ে আমাকে জানায়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ কল করি। এতে সাড়া দিয়ে তৎক্ষণাৎ নগরীর চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর কয়েকজন পুলিশসহ ঘটনাস্থলে আসেন। ওসি নবজাতককে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপন পাল বলেন, আমি ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে টহল দলের দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ সময় জরুরি সেবা থেকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি তিন চারজন মানুষ নবজাতককে ঘিরে রেখেছে। তারা না থাকলে অন্য কোনো অঘটন ঘটতে পারত নবজাতকটির জীবনে। এর পর ওসি স্যার এলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই।

চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, নবজাতকটি মেয়ে। এখন চমেক হাসপাতালের ৩২ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। শুরুতে তার অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক থাকলেও এখন শিশুটি সুস্থ আছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই নবজাতকের জন্য একটি এনআইসিইউ (নবজাতকদের আইসিইউ) বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে পরে এনআইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। এখন আমাদের এক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুটির দেখভাল করছেন।
ওসি বলেন, নবজাতকের জীবন বাঁচানোটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখানে শিশুটি কীভাবে এলো বা তার বাবা-মা কে, এসব বিষয় তদন্তের পর জানা যাবে।
এর আগে নগরীর আকবর শাহ থানায় কর্মরত অবস্থায় ২০১৭ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কর্ণেলহাটের ডাস্টবিন থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন ওসি মোহাম্মদ আলমগীর। তখন ওই নবজাতককে চমেক হাসপাতালের এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। একুশের প্রথম প্রহরে উদ্ধার হওয়ায় শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল একুশ। এ ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শিশুটির ‘মা-বাবা’ হতে আগ্রহ জানিয়ে অনেকেই আদালতে ভিড় জমান। আদালত সব দিক বিবেচনা করে জাকির ও শাকিলা দম্পতিকে শিশু একুশকে লালন-পালনের দায়িত্ব দেন।
এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেলের (পিপিএম) জন্য নির্বাচিত হন ওসি আলমগীর। পরের বছর ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসি আলমগীরকে পিপিএম ব্যাচ পরিয়ে দেন।

Share.
Exit mobile version