নিজস্ব প্রতিবেদক :- বগুরা থেকে কলেজ ছাত্রী স্ত্রী নাজনিন আক্তার (১৯) কে বরিশালের গৌরনদীতে বেড়াতে নিয়ে এসে হত্যার পর লাশ সেফটি ট্যাংকির মধ্যে গুম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাকিব হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী সাকিব (২৪) কে আটক করা হয়েছে।

আটককৃত সাকিব বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চরজাহাপুর গ্রামের আব্দুল করিমের পুত্র। স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করার পর মঙ্গলবার দিনভর লাশ উদ্ধারের জন্য তার (সাকিব) পিতা আব্দুল করিমের ভাড়াটিয়া বাসা গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামে দিনভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে গত এক বছর পূর্বে বগুড়া সদর উপজেলার সাপগ্রাম এলাকার আব্দুল লতিফ প্রমানিকের একাদশ শ্রেণী পড়ুয়া কন্যা নাজনিন আক্তার (১৯) সাথে বিয়ে হয় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুন চরজাহাপুর গ্রামের আব্দুল করিম হাওলাদারের পুত্র ও বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের ঝাড়–দার সাকিব হাওলাদারের।

কলেজ ছাত্রী নাজনিন আক্তারের ভাই আব্দুল আহাদ প্রমাণীক জানান, গত ২৪ মে তার ভগ্নিপতি সাকিব হোসেন হাওলাদার পিতার অসুস্থ্যতার কথা বলে নাজনিন আক্তারকে নিয়ে বরিশালে আসেন। পরবর্তীতে তাদের মুঠো ফোন বন্ধ ও কোন প্রকার যোগাযোগ না থাকায় ২৬ মে বগুরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী ও সেনানিবাসে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, নাজনীন নিখোঁজের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেলে সাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। এসময় সাকিব হোসেন অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে তাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে স্ত্রী নাজনিন আক্তারকে গৌরনদীর হরহর গ্রামের পিতার ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে এসে হত্যা করে সেফটি ট্যাংকির মধ্যে লাশ গুমের বিষয়টি স্বীকার করে।

ঘাতক স্বামী সাকিব হাওলাদার জানায়, নিজেকে অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিলো সে (সাকিব)। ২৪ মে স্ত্রী নাজনীনকে নিয়ে গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় আসে। সেখানে এসে স্ত্রী নাজনিন জানতে পারে তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যান চালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এসময় সাকিবের কাছে নাজনীন এসব কথা গোপন করার কারন জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগে নাজনীন তার স্বামী সাকিবকে ভিক্ষুকের ছেলে বলে গাল দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ^াসরোধ করে নাজনিনকে হত্যা করে সে (সাকিব)। পরবর্তীতে বাবা-মায়ের সহায়তায় ঘরের পেছনে থাকা সেফটি ট্যাংকিতে স্ত্রী নাজনীন আক্তারের লাশ গুম করে আবার বগুড়া ফিরে গিয়ে কর্মস্থলেযোগ দেয়।

গৌরনদী মডেল থানার ওসি তদন্ত মোঃ তৌহিদুজ্জামান জানান, সাধারণ ডায়েরী ও অভিযোগের সুত্রধরে পুলিশ সাকিব হোসেন হাওলাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার স্ত্রী নাজনিন আক্তারকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে হত্যার পর লাশ গুমের বিষয়টি স্বীকার করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় বগুড়া পুলিশ সেফটি ট্যাংকে পাম্প দিয়ে পানি নিস্কাশন করে। ট্যাংকির মধ্যে লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াসহ দুইটি নক এবং পরিধেয় ওড়না উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, সাকিবের পিতা-মাতা পলাতক রয়েছে। এছাড়াও লাশ উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

Share.
Exit mobile version