এলিসন সুঙ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় খাসিয়া পুঞ্জি প্রধানদের (মান্ত্রী) সাথে মতবিনিময় করলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি।
শনিবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় বড়লেখা উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ (ওএমআই), কুলাউড়ার লক্ষীপুর মিশনের পুরোহিত ফাদার সুমির গমেজ।
অন্যান্যদের আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিমাই মিশনের প্রধান শিক্ষক ফাদার দিপক কস্তা, আগার পুঞ্জির প্রধান (মান্ত্রী) সুকমন আমসে, বনাখালা পুঞ্জির প্রধান নরা ধার, সাংবাদিক লিটন শরীফ, মাইকেল নংরুম, মাধবকুণ্ড পুঞ্জি প্রধান ওয়ানবর এলগিরি, সাত নম্বর পুঞ্জির সাবেক পুঞ্জি প্রধান এলিয়াস বারেঃ, সেক্রেটারি পাইলট মারলিয়া, গান্দাই পুঞ্জির প্রধান রাজেস পঃস্না প্রমূখ। এ সময় বড়লেখা উপজেলায় বসবাসরত সকল খাসিয়া পুঞ্জি প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
আগার পুঞ্জির প্রধান সুকমন আমসে বলেন, গত কয়েক মাস আগে আমাদের পুঞ্জিতে দিন-দুপুরে ৩টি গাছ বাগান কতৃপক্ষ কেটেছে। তারা ৪৫-৫০ টি গাছে চিহ্ন দিয়েছে গাছগুলোর কেটে নিয়ে যাবে। গত (৩০ মে) আমাদের জুমে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সহস্রাধিক পান গাছ কেটে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীদের কাউকে সনাক্ত করা হয়নি। সরকার যদি বাগানকে বন্দোবস্ত দিতে পারে, আমাদেরকে কেন দিবেনা?
বনাখালা পুঞ্জির প্রধান নরা ধার বলেন, গত ২৮ মে আমাদের পুঞ্জির জুম দখল করে স্থানীয় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একদল ব্যক্তি আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর জুম দখল করে সেখানে তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ কর। গত ৪ জুন উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও থানা পুলিশের অভিযানে জুমগুলো উদ্ধার করে। আমরা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ। যদিও আমাদের মাঝে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দখলদারা পান জুমে পান তুলে নষ্ট করে দিয়েছে। এমনকি পান জুমের কাঁটাতার কেটে ফেলেছে। দখলের কারণে ৫টি পরিবার অসহায়ত্ব দিন কাটছে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে আমরা উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে বনাখালা পুঞ্জি দখলমুক্ত করেছি। অপরাধী যতই শক্তিশালী হউকনা কেন? আইনের কাছে তা কোন ব্যাপারই না। যেকোন ধরনের সমস্যায় পুলিশ প্রশাসন আপনাদের পাশে আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। আপনাদের সুরক্ষা, অধিকার রক্ষা ও নিশ্চিতকরণে প্রশাসন পাশে আছে। আপনাদের জন্য প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা থাকবে। যে কোন ধরনের সমস্যায় আমাকে কল করবেন। আমাকে কল দিতে ঘড়ির ঘন্টা দিকে দেখবেননা। যে কোন সময় কল দিবেন আমি রিসিভ করবো।
পরিবেশ মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, আপনাদের সমস্যার কথা শুনে আমি ইউএনও, এসপি ও ওসি কে নির্দেশ দিয়েছি দখলদারদের উচ্ছেদ করে জায়গাগুলো ফিরিয়ে দিতে। তারা যৌথ অভিযান চালিয়ে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করেছে। তিনি বলেন, বাগান সরকারের কাছ থেকে জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে খাসিয়াদের জন্য কিছু জায়গা বন্দোবস্ত দিয়েছে। আপনাদেরকে জায়গাগুলো বন্দোবস্ত দিতে হলে বাগানের কাছে দেয়া বন্দোবস্ত বাতিল করতে হবে।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যেগুলো পুঞ্জিতে সিড়ি পাননি। প্রত্যেক পুঞ্জিতে সিড়ির ব্যবস্থা করা হবে। যাদের পুঞ্জিতে বিদুৎ এখনও পৌঁছে নাই, বিদুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো রাস্তা পাকাকরণ করে দেওয়া হবে। ভূমির সমস্যা সমাধানে আমি ভূমি কমিশনার ও ইউএনও কে নির্দেশ দিচ্ছি। উনারা আপনাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে।