বিশেষ প্রতিনিধি।। ১৯ দিন পর প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশ লকডাউন শেষে আজ খুলছে সব। চলবে ট্রেনসহ অন্য যানবাহন।
কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করে আজ বুধবার থেকে সারা দেশে চলাচল করবে গণপরিবহন। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেই পর্যটন, বিনোদনকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সব কিছুই খুলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মোট পরিবহনের অর্ধেক চলাচল করবে। প্রতিটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসন অর্ধেক বাস চলাচলের সংখ্যা ঠিক করবে, দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। দুই আসনে এক যাত্রী এবং ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির বিধানও থাকছে না। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের ভাড়ায় ফিরে যাচ্ছে গণপরিবহন।
গত ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ বা টানা লকডাউনে থেকেছে দেশ। এর মধ্যে দুই দফা শিল্প-কারখানা খোলার জন্য বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। অন্যদিকে লকডাউন থাকলেও গত কয়েক দিন গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় অন্যান্য গাড়ির চাপও বাড়তি ছিল।
বিআরটিএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্ধেক বাস চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এদিকে সর্বশেষ জারি করা প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহনসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে অর্ধেক বাস চালানোর কথা বলা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হয়নি বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, অর্ধেক বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কঠিন হবে।
সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে গত ৩ আগস্ট উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে হওয়া আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। বৈঠকে ১২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অর্ধেক বাস চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় প্রশাসন আলোচনা সাপেক্ষে অর্ধেক গণপরিবহন চালাবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রশাসন যদি প্রয়োজন মনে করে, অর্থাৎ দেখে যে অর্ধেক গণপরিবহন চালু থাকলে স্বাস্থ্যবিধি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা মানা যাচ্ছে না, তাহলে ৭০ শতাংশ, ৮০ শতাংশ বা শতভাগ গণপরিবহন চালু করলেও বাধা নেই বলে তিনি মনে করেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করবে। কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারবে না।
অর্ধেক বাস চালানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘এটা একটি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। বাস চলাচল করলে যাত্রী উঠবেই। যাত্রী ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। না নিলে বাস ভাঙচুর হবে, মারামারি হবে।’ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে মাঠের অভিজ্ঞতা বর্জিত কিছু লোক উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। এতে প্রতিদিন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের সংঘর্ষ অবস্থার সৃষ্টি হবে।