বিশেষ প্রতিনিধি।। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এ অতিরিক্ত টাকা নিয়ে জমি খারিজ করায় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাসহ দুইজনকে আটক করেছে ভুক্তভোগীরা। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায় তাদের উদ্ধার করেন।
মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মা দীর্ঘদিন যাবত লোকজনের সরলতার সুযোগ নিয়ে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নিয়ে জমির খারিজ করে দিচ্ছিলেন। এভাবে তিনি বহু লোকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন।
পাঁচবাগ ইউনিয়নের নলছিড়া গ্রামের মৃত মিলন মিয়ার স্ত্রী মোছা. পান্না খাতুন (৪৫) বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। জমি খারিজ দিব কইয়া নায়েব ২০ হাজার টেহা নিয়া ৬ মাস ঘুরাইয়া খারিজ দিছে।
দিঘীর পাড় গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম বলেন, আমি ১৬ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৪৮ শতাংশ জায়গা করাইছি।
উত্তর হারিনা গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম (৫০) বলেন, ৯ কাঠা জমি খারিজ করাইছি ৪৫ হাজার টাকা দিয়া।
চৌকা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে জসিম উদ্দিন সাড়ে ২৩ শতাংশ জমি ৮ হাজার টাকা দিয়ে খারিজ করেছেন। একই ধরনের অভিযোগ করেন উত্তর হারিনা গ্রামের জালাল উদ্দিন, চর শাখচূড়া গ্রামের হুমায়ুন করিব, চৌকা গ্রামের শাহজাহান, পাঁচবাগ গ্রামের নাসির উদ্দিনসহ অসংখ্য মানুষ। খারিজের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় লোকজনের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল
দীঘির পাড় গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলামের কাছ থেকে জমি খারিজের কথা বলে ১৬ হাজার টাকা নেন রমেন্দ্র নারায়ন বিশ্বশর্মা। কিন্তু মঙ্গলবার খারিজের রশিদে ২৩৫ টাকা লেখা দেখে কামরুল ইসলাম ভূমি কর্মকর্তা বিশ্বশর্মাকে ১৬ হাজার টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে দুজনের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজনের প্রতিবাদ হৈচৈ শুনে আরো ভুক্তভোগীরা ছুটে এসে ঐক্যবদ্ধভাবে পাঁচবাগ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘেরাও করে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় কক্ষের ভিতর ভূমি কর্মকর্তা ও তার ব্যক্তিগত সহকারী রিফাত ছিলেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীদের সুবিচারের আশ্বাস দিগয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ন বিশ্বশর্মা বলেন, বিপদে পড়ায় লোকজন এখন বেশী বেশী বলছে। অল্প টাকা নেওয়া হয়েছে। এত টাকা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাবেরী রায় বলেন, সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা আটক করেছিলেন। খবর পেয়ে আমি আর নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার ঘটনাস্থলে গিয়ে উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা এবং তার ব্যক্তিগত সহযোগী (সরকারি কর্মচারী নয়) রিফাতকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। পরে রিফাতকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর এ ব্যাপারে ডিসি স্যারের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অভিযুক্ত উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে অভিযুক্ত উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমেন্দ্র নারায়ণ বিশ্বশর্মাকে সাময়িক মৌখিকভাবে অব্যাহতি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত অন্য কাউকে দিয়ে তার কাজ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।