বিশেষ প্রতিনিধি।। হঠাৎ করে উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি হুহু করে আসায় তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ধারণা ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সড়কটি ভেঙে গেছে।
ফলে পানির প্রবল স্রোতে গড্ডিমারী ও সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের তিস্তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি রাস্তা ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বন্যা কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে এসেছেন জেলাপ্রশাসক আবু জাফর।
বুধবার ২০ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস বাঁধ, গড্ডিমারী ও সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের তিস্তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি রাস্তা ভেঙে গেছে। ফলে হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। ডুবে গেছে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা পাড়ের মানুষের মাঝে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বুধবার দুপুরে পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। হাতীবান্ধার বড়খাতা হতে গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় হয়ে মেডিকেল মোড় বাইপাস পাকা সড়কটির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়ছে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে নিলফামারী জেলার সাথে লালমনিরহাটের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাইপাসটি ভেঙে যাওয়ায় পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর পাকা ধানক্ষেতসহ আলু, ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, প্রতিবার বন্যার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যার আগাম পূর্বাভাস জানানো হলেও এবার তা জানানো হয়নি। ফলে বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক শ্যামলন বলেন, এবারের বন্যা ঐতিহাসিক বন্যা। তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙ্গে গড্ডিমারী ইউনিয়ন ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে। তালেবমোর বাঁধসহ পাকা রাস্তা ভেঙ্গে হাজার হাজার একর আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে শতশত পুকুরের মাছ। অসংখ্য ঘড় বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে অত্র ইউনিয়নবাসী। সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগীতা চাই।
সিঙ্গিমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, এবারের বন্যায় নজিরবিহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আমার ইউনিয়নের। ভেশ্বির মোড় হতে ধুবনী পর্যন্ত ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তার বাধ ভেঙে দিয়ে হাজার হাজার একর ফসলি জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিউল আমিন বলেন, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গেছে। বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা নির্ণয় করে দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।