বিশেষ প্রতিনিধি।।নাটোরের লালপুরে সরকারি একটি দিঘির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ মীমাংসার উদ্যোগ নেয় পুলিশ। এরই মধ্যে আজ শুক্রবার ভোরে হামলায় এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অপর এক কৃষক। উপজেলার ঈশ্বরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহত কৃষকের নাম মখলেছুর রহমান (৪০)। তিনি একই গ্রামের ছইমুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। আহত কৃষক হলেন ছাপাত মণ্ডল (৫৫)। তাঁর বাড়িও ঈশ্বরপাড়া গ্রামে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
লালপুর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরপাড়া গ্রামে সরকারি একটি দিঘির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রামের বাদশা প্রামাণিক ও সাহাবুল ইসলামের নেতৃত্বে দুটি পক্ষ গড়ে উঠেছে। এক যুগ ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদ ও সংঘাত চলে আসছে। উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ২০টি মামলা আছে। এসব ঘটনার জেরে এক মাস ধরে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এবার পুলিশ প্রশাসন সামাজিকভাবে উভয় পক্ষের বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেয়।
সে অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও অন্য জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। ওই দিন পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ একটি পক্ষ বৈঠকে উপস্থিত হলেও অপর একটি পক্ষ অনুপস্থিত ছিল। শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি বাতিল হয়। এর পর থেকে পুলিশ প্রতি রাতে গ্রামে টহল দিয়ে আসছিল। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাহাবুল পক্ষের সমর্থক মখলেছুর রহমান মসজিদের শৌচাগার থেকে বের হওয়ামাত্র আগে থেকে লুকিয়ে থাকা বাদশা প্রামাণিক পক্ষের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁরা ঈশ্বরপাড়া বাজারে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে ছাপাত মণ্ডলের ওপর হামলা করেন। এ সময় টহলরত পুলিশ তাঁকে রক্ষা করে। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশের সহযোগিতায় গুরুতর আহত মখলেছুর রহমান ও ছাপাত মণ্ডলকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। সেখান থেকে মখলেছুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মখলেছুরের ভাই মন্টু বলেন, প্রতিপক্ষ এর আগে তাঁদের লোকজনের হাত, পা কেটে নিয়ে পঙ্গু করেছে। প্রশাসন প্রতিপক্ষকে কঠোর শাস্তি না দিলে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে না।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান বলেন, গ্রামের একটি সরকারি জলাশয়ের ইজারা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এর আগেও অনেকবার দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। বহু মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। এবার পুলিশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য বসার ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু এক পক্ষের অনীহার কারণে বসা হয়নি। হঠাৎ আজ ভোরে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের বাধার মুখে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। তবে হামলায় একজন মারা গেছেন।
এ ঘটনায় আজ দুপুর ১২টার দিকে গ্রামে কিছু লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন দেন বলে খবর পাওয়া যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান।

Share.
Exit mobile version