করোনা হাসপাতাল ফাঁকা
বিধিনিষেধও মানা হচ্ছেনা কোথাও, স্বস্তির ভাব সবখানে

বিশেষ প্রতিনিধি।। দেশে কমে এসেছে কভিড-১৯ সংক্রমণ। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নেমে আসায় জনজীবনে ফিরেছে স্বস্তি। খুলেছে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন। শয্যা ফাঁকা করোনা হাসপাতালে।

১২ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে দেওয়া হচ্ছে টিকা। সংক্রমণ নেমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে কোনো দেশে যদি টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বলে ধরা হবে। দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ে স্বস্তি এসেছে।

তবে এ স্বস্তিতে তুষ্ট হয়ে স্বাস্থ্যবিধিতে ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। মানুষ মাস্ক পরছে না, শপিং মল, গণপরিবহন, বেসরকারি অফিস, রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অভিভাবকের ভিড়, হাসপাতালসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। স্বস্তিতে ভুগে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে আবার বিপর্যয় আসতে একটুও সময় লাগবে না। তার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর উদাহরণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে এসেছে। তবে তার মানে এই নয় যে করোনা চলে গেছে। এখন তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, মাস্ক পরছেন না।

কিন্তু সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। ’ মার্চ থেকে হঠাৎ বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। জুন পর্যন্ত হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। রোগী নিয়ে হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়েছে স্বজনদের। আইসিইউর জন্য ছিল হাহাকার। জুলাইয়ের শেষ সপ্তায় দেশে কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ হার। ২০ আগস্ট আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৯৯৩ জন, মারা গেছেন ১৪৫ জন। শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০ সেপ্টেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৫৫৫ জন, মারা গেছেন ২৬ জন। শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০ অক্টোবর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৬৮ হাজার জন, মারা গেছেন ছয়জন। শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ১ নভেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন ২১৪ জন, মারা গেছেন দুজন। শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ০৮। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২১৫ জন, মারা গেছেন ছয়জন। সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ২০৯ জন। করোনা শনাক্তের হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে চারজন ও খুলনা বিভাগে দুজন মারা গেছেন। এখন বদলে গেছে সংক্রমণের চিত্র। রাজধানীর করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে ৫ হাজার ১৩৯ শয্যার মধ্যে ৪ হাজার ৬৫১ শয্যা ছিল ফাঁকা। ৭৮৬টি আইসিইউর ৭১০টিতে ছিল না রোগী ভর্তি। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৬৯ শয্যার ৬টিতে রোগী ভর্তি ছিল। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ শয্যার মধ্যে ১৪৮টি ফাঁকা ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০৫ শয্যার ৩৮০টিই ছিল ফাঁকা। এসব হাসপাতালে আইসিইউর চিত্রও একই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘দেশে কভিড-১৯-এ চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। তবে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মার্চে তৃতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকা কর্মসূচিতে ঢিল দেওয়া যাবে না। ’ তিনি আর বলেন, ‘কভিড-১৯ রেসপিরেটরি গ্রুপের একটি ভাইরাস। সেপ্টেম্বরে দেশে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা সক্রিয় হচ্ছিল। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রেসপিরেটরি গ্রুপের অন্য ভাইরাস সক্রিয় থাকবে। এ ভাইরাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য একটি ভাইরাস শরীরের এক অংশে ঢুকলে অন্য ভাইরাসকে আর ঢুকতে দেয় না। ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোভাইরাস ফুসফুস কিংবা শরীরের যে কোনো অংশে ঢুকলে কভিড-১৯-কে আর ঢুকতে দেবে না। এটা নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। ফলাফল হাতে এলে আরও পরিষ্কার ধারণা দেওয়া যাবে। ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হয় মার্চের দিকে বেড়ে আবার মে মাসে কমতে পারে। এ ঢেউয়ের শঙ্কা থাকায় অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, ধারাবাহিকভাবে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।

Share.
Exit mobile version