বিশেষ প্রতিনিধি।। কেউ অটোরিকশা চালক, কেউ দোকানের কর্মচারী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, আবার কেউ অফিসের পিয়ন। তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত। চক্রের সদস্য সংখ্যা অন্তত ২০ জন। এ চক্রের সদস্যরা দিনে বিভিন্ন পেশায় জড়িত থাকার পাশাপাশি টিকটক ভিডিও বানাত। যেখানে সশস্ত্র চিত্র ধারণ করা হতো। রাতে তারা ছিনতাইয়ে নেমে পড়ত।

গত দুই-তিন বছর ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বসিলা ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া, ভাড়ায় শোডাউন করে আসছিল চক্রটি। সোমবার রাতে এক দম্পতি চক্রটির দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। র্যাব-২ এ অভিযোগ করার ১০ মিনিটের মধ্যে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২ এর একটি দল।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- রুমান ,গ্যাং লিডার শরীফ ওরফে মোহন, উদয়, শাকিল, নয়ন ও জাহিদ। অন্যদিকে বাকি তিন জনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি । এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি ছুরি, একটি স্টিলের হাতলযুক্ত কুঠার, ৫০ পুরিয়া, দুটি স্টিলের তৈরি ছুরি, একটি স্টিলের তৈরি হোল্ডিং চাকু, একটি প্লাস্টিকের পিস্তল সদৃশ্য, ৬৫ পিস ইয়াবা ও গাঁজা খাওয়ার সরঞ্জাম এবং তিনটি মোবাইল ফোনসেট। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, রাজধানীর বেশকিছু এলাকাকে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও বসিলা ও রায়েরবাজার এলাকা অন্যতম। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব।

সোমবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা উদ্যানের সামনে থেকে র্যাব-২ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে ছিনতাইয়ের খপ্পরে পড়ার তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা চান এক দম্পতি। র্যাব-২ এর গোয়েন্দা ও টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর রায়েরবাজার এলাকা থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ভ্যানিটি ব্যাগ।

রাতেই র‌্যাবে টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে চাঁদ উদ্যান সংলগ্ন সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির লিডার মোহনসহ আরও পাঁচ সদস্যকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ধারাল অস্ত্র, পিস্তল সদৃশ্য ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামক একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের সদস্য। চক্রের সদস্য অন্তত ২০ জন। দলের লিডার মোহনের নেতৃত্বে দুই/তিন বছর আগে গ্যাংটি গঠন করা হয়। এরা মোহন সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এ গ্রুপের সদস্যরা আগে লেবেল হাই গ্যাং এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। অন্তকোন্দলে যা পাঁচ/ছয়টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে সক্রিয়।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, দুই/তিন বছর ধরে কিশোর গ্যাং চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চুরি-ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তারা ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে হুমকি ও মারপিটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া নারীদের উত্ত্যক্তকরণসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

গ্রেফতারকৃতরা লেগুনা, অটোরিকশা চালক, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ কর্মী ও অফিসের বার্তাবাহক পেশার পাশাপাশি মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে গ্রাহকদের টার্গেট করত।

‘ভাইব্বা ল কিং’ চক্রটিকে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্ত করা হয়েছে। চক্রে জড়িত পলাতকসহ পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, র‌্যাবই প্রথম গ্যাং কালচারের নামে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাং বিরোধী অভিযান শুরু করে। এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং এর তালিকা করে ইতোপূর্বে র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করেছে । অনেককে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Share.
Exit mobile version