বিশেষ প্রতিনিধি।। উপকূলীয় বরগুনা জেলার তালতলীর গ্রাম বেহেলা। এখানে প্রতি বছর শীত মৌসুমে গোল গাছের রস সংগ্রহ করে গাছিরা। রস থেকে বানানো হয় গুড়। বর্তমানে গোল গাছের রস থেকে উৎপাদিত গুড় যাচ্ছে ভারতে।

মৌসুমে ব্যস্ত সময় কাটে গাছিদের। প্রায় চার মাস কর্মসংস্থান হয় দুই হাজার গাছির। এতে অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির। তবে গাছিদের দাবি রয়েছে প্রশিক্ষণ ও গুড় সরকারিভাবে বাজারজাতকরণে সহযোগিতা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ হাজার গোল গাছ রয়েছে। গোল গাছের বাহর থেকে সংগৃহীত রস জ্বালিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ১০ হাজার টনেরও বেশি গুড় উৎপাদিত হয়।

সবচেয়ে বেশি গাছ আছে বেহেলা গ্রামে। গ্রামটিতে গোল গাছের সংখ্যা ১৫ হাজার। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ রয়েছে গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য আরো কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে আরো পাঁচ হাজারের মতো গাছ।
স্থানীয়ভাবে গোলের বাগানকে বলা হয় ‘বাহর’। বেহেলার গোল বাহরে কাজ করে প্রায় পাঁচশত গোল চাষি। এই গ্রামে গোলের বাহর রয়েছে দুই হাজার প্রায়। একজন গাছি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি গাছের রস আহরণ করতে পারেন।
শীত মৌসুমকে সামনে রেখে গাছিরা নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত রস সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে গোল গাছের রস ঝরা শুরু হলে তারা খরচা কমানোর জন্য প্লাস্টিকের পাত্র বসিয়ে সেই রস সংগ্রহ করেন। শীত যত তীব্র হয় এই রসের চাহিদাও তত বেড়ে যায়।

গোলের রস প্রতি কলস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়।

এদিকে এই গ্রামের গোলের গুড় চলে যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেখানেও এর চাহিদা রয়েছে অনেক। তবে গাছিরা চাচ্ছে সরকারিভাবে তাদের গোলের গুড়গুলো বিদেশে গেলে আরো ভালো দাম পাওয়া যাবে।
বেহেলা গ্রামের সমির জানান, আমার ৩০০ গাছ আছে। এগুলো নিজেই কেটে রস সংগ্রহ করি। গুড় তৈরি করে গ্রামে বিক্রি করি। আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে গুড় তৈরি করাতে শীতকালীন এ সময়ে প্রচুর অর্ডার পাই। আমার ৩০০ গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় আট কলস রস হয়। দিনে গড়ে দুই হাজার টাকার গুড় আসে।

একই গ্রামের মহিলা গাছি চামেলি বলেন, এই মৌসুমে যে গোলের রস পাই তাতে ধান চাষের চেয়ে গোলের রস ও গুড়ে আয় বেশি। ৩৩ শতাংশ জমিতে যে পরিমাণ ধান চাষ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয় গোলের গুড়ে। এ জন্য আমরা ধান চাষ রেখে গোল চাষে আগ্রহী হয়েছি।

চাষি লাল চন্দ্র বলেন, ভারতে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সুবাদে সেখানে (ভারত) কিছু বিক্রি করা হয়। তবে সরকারিভাবে যদি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আমরা আরো লাভবান হতাম।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম বলেন, আমাদের কাছে গোল গাছের সঠিক তথ্য নেই। এ ছাড়াও গোল গাছ নিয়ে কৃষি বিভাগের কোনো কাজও নেই। আমরা মাঠকৃষকদের নিয়ে কাজ করে থাকি। তবে এই গোলের গুড়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গোলপাতাকে গবেষণার মাধ্যমে গোল গাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে এটা খুব কাজে লাগবে। আমার দফতর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে খুব দ্রুত একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে।

Share.
Exit mobile version