রাঙা প্রভাত অনলাইন ডেস্ক।। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে। সম্ভব হলে মার্চ মাসের মধ্যেই এ ঘোষণা দিতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে জোরেশোরে কাজ চলছে। তবে সংকট সৃষ্টি হয়েছে চলতি অর্থবছরে মাত্র ২৫০ কোটি বরাদ্দ নিয়ে। এই টাকায় আবেদনের তুলনায় খুব বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেওয়া শুরু হয়। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ ছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে সাড়ে চার হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। আর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে প্রায় তিন হাজার ৯০০ মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। আবেদনকৃত মোট সাড়ে আট হাজার প্রতিষ্ঠানের ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। তাঁরা অবকাঠামো ও জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড থেকে আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলাফল ও স্বীকৃতি নবায়নের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।

এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আমরা শেষ করেছি। এখন ২০২১ সালের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের কাজ চলছে। আশা করছি, মার্চ মাসের মধ্যেই আমরা আমাদের কাজ শেষ করতে পারব। ফলে মার্চের শেষে বা এপ্রিলে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। ’

যোগ্য সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাবে কি না-এই প্রশ্নে ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে যে টাকা বরাদ্দ আছে, আমরা প্রাথমিকভাবে সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করব। এর বাইরে আরো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্ত নেবে। ’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ রয়েছে ৫০ কোটি টাকা। যদি যোগ্যতার তালিকায় সম্পূর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি আসে, তাহলে ৬০০ থেকে ৭০০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুযোগ রয়েছে। আর যদি স্তর পরিবর্তন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে সেই সংখ্যা আরো বাড়বে। আর ২০১৯ সালে সর্বশেষ দেওয়া এমপিওভুক্তির পর ওই খাতে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা অব্যয়িত ছিল। সেই টাকা ২৫০ কোটি টাকার সঙ্গে যোগ হলে এমপিওভুক্তির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

২০২১ সালের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ-অষ্টম) বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি পেতে শহর ও মফস্বলে ন্যূনতম ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে যথাক্রমে ১২০ ও ৯০ জন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ-দশম) ক্ষেত্রে শহর ও মফস্বলে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২০০ ও ১৫০। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪২০ ও ৩২০। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে (একাদশ ও দ্বাদশ) ন্যূনতম ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হবে শহরে ১৮০ জন এবং মফস্বলে ১৪০ জন। স্নাতক (পাস) কলেজে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯০ ও ৪২৫।

একইভাবে এমপিওভুক্তি পেতে পাসের হারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় শহর, জেলা সদর/পৌরসভা এবং মফস্বল এই তিন ক্যাটারিতে পাসের ন্যূনতম হার হতে হবে যথাক্রমে ৭০, ৬৫ ও ৬০ শতাংশ। এসএসসিতে তা যথাক্রমে ৭০, ৬০ ও ৫৫ শতাংশ। এইচএসসিতে শহরে ৬৫, জেলা সদর ও পৌরসভায় ৫৫ এবং মফস্বলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাস করতে হবে। এসব শর্ত পূরণ করতে পারলেই ওই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যোগ্য হবে।
বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান যোগ্য হওয়ার পরই সরকার তাকে স্বীকৃতি দেয়। তাহলে এখন কেন আবার নতুন করে যোগ্যতার যাচাই করা হবে? করোনাকালে নন-এমপিও শিক্ষকরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করেও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির দাবি জানাচ্ছি। ’

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস যাচাই-বাছাই শেষে ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক হাজার ৬৩৩ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে। তবে এ বছর ঘোষণার আগেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Share.
Exit mobile version