ধ
কামরুল হাসান সোহাগ
বার মাসে তের পার্বণ’ খ্যাত অসাম্প্রদায়িক ও উৎসবপ্রিয় বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের অন্যতম একটি হল পহেলা বৈশাখ।
মনেপ্রানে উৎসবপ্রিয় বাঙ্গালী হিসেবে আমার ও এই নববর্ষ বরণ নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। আনন্দঘন, উৎসবমুখর এই দিনটি নিয়ে ভাবতে গেলেই কিছু ভাবনা আপনা-আপনি চলে আসে। পহেলা বৈশাখ মানেই আমার কাছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, রঙ্গিন আল্পনা, গরদ তথা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, মাটির গয়না, হাত খোঁপায় জড়িয়ে, রাখা চুলে ফুলের ছোঁয়া, মেহেদী-আলতার রঙ্গে হাত রাঙ্গানো,বৈশাখী মেলায় ঘুরতে ঘুরতে মুড়িমুড়কি, মন্ডা-মিঠাই এর স্বাদ নেওয়া, নাগরদোলা, পুতুল নাচ এর এক অভূতপূর্ব সমন্বয় এই দিনটি। নিজেকে এবং নিজের শেকড় কে নতুনরূপে ফিরে পেতে এই দিনটি বরাবরই আমার কাছে অনন্য।
পয়েলা বৈশাখ কেন্দ্রিক আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের সমাজটা একদিন এমন হবে যেদিন বর্ষবরণের দিনে কোন পথশিশু ভাত খাবার জন্য দুটো পয়সা চেয়ে কাঁদবেনা, ফেলে দেওয়া তরমুজের খোসা, পান্তার বাসন খুঁটে খাবার খুঁজে ফিরবেনা। সমাজের উঁচু তলার মানুষগুলোর বদ্ধ গাড়ির কাঁচের সামনে ফুল হাতে কাকুতি-মিনতি করবেনা কোন শিশু। আমাদের সমাজে সামর্থ্যবান মানুষের অভাব নেই। খুঁজলে এমন অনেক পাওয়া যাবে যারা নতুন বছরকে বরণ করতে হাজার হাজার টাকা শপিং সেন্টারে বিলিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসেই। আমি বলিনা যে মানুষ শখ পুরন করবেনা। মানুষ অবশ্যই তার শখ পূরণ করবে কিন্তু একবার ভেবে দেখা বোধহয় উচিত যে আমার শখের জন্য বরাদ্দ হাজার টাকার সামান্য কিছুটা দিয়ে আমি আরও একজনের শখ না বরং প্রয়োজন মেটাতে পারি।
লিখছি বলেই না, আমার মন এভাবেই আমাকে বলে। আমি জানি হয়ত আমি একা না, আমার মত এরকম ভাবে আরও অনেকেই ভাবেন। সেটাই আশার কথা। আমরা জাতিগত ভাবে আশাবাদী আর তাই আশা করি এমন একদিন অবশ্যই আসবে যেদিন আমার এই ভাবনাগুলো সত্য হবে, মানুষ বুঝতে শিখবে জাতির ঐতিহ্য রক্ষায় সব থেকে আগে দরকার মানুষগুলোকে রক্ষা করা আর সেদিনই বর্ষবরণ খুঁজে পাবে প্রকৃত সার্থকতা।
লেখক-
সহ সম্পাদক, ডেইলি রাঙা প্রভাত।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সম্ভাবনার কলসকাঠী।