ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে ফের পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে দুদিনে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। যদিও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

জানা যায়, আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্দর দিয়ে সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল ৬৮ ট্রাকে এক হাজার ৯০২ টন পেঁয়াজ এসেছে। এরপর ঈদের ছুটি শেষে ৭ মে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ আসেনি। ঈদের আগে বন্দরে পেঁয়াজ ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০-২২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মঙ্গেলাবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে, যা দুদিন আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০ টাকা, যা দুদিন আগে ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২০ দশমিক ৬৯ ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১৬ দমমিক ৬৭ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সিদ্দিক বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হলেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। এবারও বন্ধ হওয়ায় দাম বেড়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে সরবরাহ ঠিক আছে। খুচরা বাজারেও কোনো সংকট নেই। পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দরে বিক্রি করায় বেশি দরে খুচরা বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই বাজারে পাইকারি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, বন্দরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। যে কারণে সেখান থেকে বেশি দরে পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে আসছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজে টান পড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। হিলি বন্দরের আমদানিকারক শাহরিয়ার আলম জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য পাওয়া ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ ছিল চলতি মাসের ৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত ছয় দিন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। একইভাবে দেশের অন্য বন্দর দিয়েও এ সময় পেঁয়াজ আসেনি। এ কারণে ওই সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়ে ?ওঠেনি। সরকার নতুন করে আমদানির অনুমোদন না দেওয়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছে না। আমরা ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। ঈদুল আজহায় পেঁয়াজের চাহিদা মাথায় রেখে দ্রুত আমদানির অনুমতি দিলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, হিলি দিয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ এসেছে। এরপর কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। গত ২৯ মার্চ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়। সে সময় রমজানে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সময় বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। নতুন আমদানির অনুমোদন না মেলায় আমদানি বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ আবার তা চালু হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চট্টগ্রামে বাড়তে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম। সোমবার খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ভারতীয় ভালোমানের পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকা। মঙ্গলবার সকালে ওই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার থেকে নতুন করে আমদানি অনুমতি (আইপি) না মেলায় সরবরাহ সংকটে বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বস্তাপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আড়াইশ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ছয় টাকার বেশি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এ অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রামে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের হিলি সীমান্তে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য পেঁয়াজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত শত ট্রাক। নতুন করে আমদানি অনুমতি (আইপি) না মেলায় এসব পেঁয়াজ আনতে পারছেন না আমদানিকারকরা। আগের যে আমদানি অনুমতি ছিল তার মেয়াদ গত মাসের ৫ তারিখে শেষ হয়ে যায়। নতুন করে আমদানি অনুমতি না পাওয়ায় আমদানিকারকরা সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দেশে প্রবেশ করাতে পারছেন না।

সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভালোমানের ২৭ টাকায় বিক্রি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এখন ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা বিক্রি হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দামও। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৩ থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৮ থেকে ২৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে পাইকারিতে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৩শ টাকা ও দেশি পেঁয়াজের দাম বস্তায় বেড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আইপি অনুমোদন নিয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। যে কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে আমদানির অনুমতি দিলেও এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত। আমদানি অনুমতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণেই গত দুই দিনে খাতুনগঞ্জে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। দ্রুত আমদানির অনুমতি না পেলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

তবে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের প্রায় প্রতিটি আড়তে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত দেখা গেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ না থাকলে দুদিনেই এই পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আবার বর্তমান দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হবে ক্রেতাদের। একইভাবে কয়েক মাস থেকে মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের নিউ শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানিও বন্ধ রয়েছে। এখন ভারতীয় পেঁয়াজ দিয়েই বাজারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদান বন্ধ থাকলে বাজারে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হবে। বাজারে এখন যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে কয়েকদিনের মধ্যে সেই মজুত শেষ হয়ে যাবে। সরকারের উচিত দ্রুত আমদানি অনুমতি (আইপি) দিয়ে দেওয়া।

Share.
Exit mobile version