ক্রীড়া প্রতিবেদক।। গুলশান লেকের পাড়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসার্স কোয়ার্টার্সের দেয়ালগুলো নানা রঙে রঙিন হয়ে হাসছে। বিখ্যাত সব ফুটবলার দেয়ালের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছেন তুলির আঁচড়ে।
১২ হাজার বর্গফুটের সেই গ্রাফিতিতে কোন বড় তারকা নেই? চুল আর মুখের অবয়ব দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, এই তো ফুটবল–ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। দেয়ালে চোখ রাখতে রাখতে কয়েক পা এগোলেই দেখা মিলবে দুই হাতের দুই তর্জনী তুলে গোল উদ্যাপন করা লিওনেল মেসিকে।
ট্রফি ঘিরে নানা আয়োজনের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ বলতে হবে, আজকের নৈশভোজে কয়েকজন নারী পোশাকশ্রমিকের আমন্ত্রণ পাওয়া।
ব্রাজিল সমর্থক হলে এতক্ষণে মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। না, ব্রাজিল দলের প্রাণভোমরা নেইমারও আছেন, বাইসাইকেল কিক নিচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে এ দেশের মানুষের উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশও ফুটে উঠেছে এই গ্রাফিতিতে।
বাংলাদেশে কোকা–কোলার বাংলাদেশ জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্কের ব্যবস্থাপনায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চারুকলার ২৫-৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিবিড়ভাবে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন এ দেশের ফুটবল উন্মাদনা। যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গলি–গ্রাফিতি’।
সব আয়োজনই আজ বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ট্রফি আসাকে কেন্দ্র করে। ট্রফি ঘিরে নানা আয়োজনের মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ বলতে হবে, আজকের নৈশভোজে কয়েকজন নারী পোশাকশ্রমিকের আমন্ত্রণ পাওয়া।
কাতার বিশ্বকাপ সামনে রেখে গত ১২ মে দুবাই থেকে কোকা-কোলার আয়োজনে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্বভ্রমণের শুরু। ৫৬টি দেশ ঘোরার পথে ফিফা বিশ্বকাপের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কোকা-কোলার উদ্যোগে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহায়তায় বাংলাদেশে আসছে ট্রফিটি।
পাকিস্তান থেকে বিশেষ বিমানে যা বেলা ১১টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। সঙ্গে থাকবেন ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী দলের মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু ও ফিফার সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায় ট্রফিটি রাখা হবে র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে।
বিশ্বকাপ ফুটবলের অনেক দলের জার্সিই বাংলাদেশে বানানো হচ্ছে। নির্বাচিত অতিথিদের সঙ্গে নৈশভোজে তাই কয়েকজন নারী পোশাককর্মীও থাকবেন।
আশরাফ কায়সার, প্রধান নির্বাহী, বেঞ্চমার্ক
এর আগেও বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ট্রফির আগমন নিয়ে শোরগোলের কথা মনে থাকতে পারে অনেকের। তবে ২০১৩ সালে ট্রফিটা এসেছিল, সেটি ছিল আসল ট্রফির রেপ্লিকা। এবার আসছে আসল ট্রফি।
বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলোয়াড় ও রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া আর কারও যেটি স্পর্শ করার অধিকার নেই। ক্রিস্টিয়ান কারেম্বুর ট্রফির সফরসঙ্গী হওয়াও সে কারণেই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে আজ বঙ্গভবন ও গণভবনেও নিয়ে যাওয়া হবে বিশ্বকাপ ট্রফিটি।
রাতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে নৈশভোজ, যা একটু আলাদা বিশেষত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশের কয়েকজন নারী পোশাকশ্রমিকের উপস্থিতির কারণে। যাঁদের আমন্ত্রণ জানানোর কারণটা জানা গেল বেঞ্চমার্কের প্রধান নির্বাহী আশরাফ কায়সারের কাছ থেকে, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলের অনেক দলের জার্সিই বাংলাদেশে বানানো হচ্ছে। নির্বাচিত অতিথিদের সঙ্গে নৈশভোজে তাই কয়েকজন নারী পোশাককর্মীও থাকবেন।’
সাধারণ মানুষ বিশ্বকাপ ট্রফি সরাসরি দেখার সুযোগ পাবেন আগামীকাল। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত আড়াই হাজার নির্বাচিত দর্শক হোটেলে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখার সুযোগ পাবেন।
ছবিও তুলতে পারবেন ট্রফির সঙ্গে। বিকেলে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে যাওয়া হবে আর্মি স্টেডিয়ামে। যেখানে কোকা–কোলা আয়োজন করছে জমকালো এক কনসার্ট। স্টেডিয়ামে ঢোকার সুযোগ পাবেন ২৫ হাজার দর্শক—অনলাইনে নিবন্ধনকৃত প্রায় দেড় লাখ মানুষের মধ্য থেকে যাঁদের বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বকাপ ট্রফির বাংলাদেশে আসা উদ্যাপন করতে আরেকটি বিশেষ আয়োজনও আছে। র্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগের ২০টি ছবির একটা বিশেষ প্রদর্শনীও। যে ছবিগুলো প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী শামসুল হকের তোলা।
বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা সফর শেষে আগামীকাল রাত ১২টা ১০ মিনিটে বিশ্বকাপ ট্রফি উড়াল দেবে পরবর্তী গন্তব্য পূর্ব তিমুরের উদ্দেশে।