রফিকুল ইসলাম রনিঃ–  বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতার অভাব বাঁশ ও বেতের সংকট ও আধুনিক প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ, বেতশিল্প। ফলে এ পেশায় নিয়োজিত শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। একদিকে কাঁচামালের উচ্চ মূল্য অন্য দিকে বাজারে কম দামের প্লাস্টিক সামগ্রী। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় বিলুপ্তি হতে বসেছে নদী বেষ্ঠিত বাবুগঞ্জসহ দক্ষিণঅঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।

এ জন্য পেশা বদল করত বাধ্য হচ্ছেন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। যারা এ পেশা এখনো আকড়ে ধরে আছেন তারা মানবেতর জীবন যাপন করচ্ছেন। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, গৌরনদীসহ প্রতিটি উপজেলায় তৈরি হয় বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন জিনিসপত্র। দক্ষিণের বিভিন্ন  উপজেলায় দরিদ্র  পরিবার রয়েছে, যারা বংশ পরসপরায় বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা বাঁশ ও বেত দিয়ে কুলা, ডালা, ঝুড়ি, চালন, চাটাই, মোড়া, খাড়ই, টুরকি ও চেয়ারসহ হরেক রকমের নিত্য নতুন প্রয়োজনিয় দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে থাকেন। আর এসব সামগ্রী যুগ যুগ ধরে মানুষের সাংসরিক প্রয়োজনে ব্যবহিত হয়ে আসছে। তবে বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সস্তা প্লাস্টিক সামগ্রী। ফলে ক্রেতারাও ঝুকছে প্লাস্টিক সামগ্রীর দিকে।

 

বেত গাছ

এমতাবস্তায় এ শিল্পে নিয়োজিতরা কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এক সময় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি সামগ্রীর মেলা বসত দক্ষিণঅঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু বর্তমানে তা অনেক কমে যাচ্ছে। এসব দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে চলতো শত শত পরিবারের সংসার। বাঁশ ও বেতের সংকট দেখা দেয়া ও মূল্য বৃদ্ধির কারনে অনেক শ্রমিক এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা গ্রহন করছেন। বাঁশ ও বেতের দ্রব্য সামগ্রীর কদর এখনও রয়েছে গ্রাম গঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে। প্রতিবছর বোরো ও আমন ধানের মৌসুমে কুলা ও টুরকি (হাজি) কৃষকদের ক্রয় করার ধুম পড়ে যায়। সাংসরিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় টুরকি। মাটি কাটা ও মৃৎ শিল্পিদের জন্য টুরকি একটি প্রয়োজনীয় উপকরন। কাজে ব্যবহার করা হয় টুরকি।

মাটি কাটা ও মৃৎ শিল্পিদের জন্য টুরকি একটি প্রয়োজনীয় উপকরন। বাঁশ ও বেতের সাহায্যে আকর্ষনীয় ভাবে তৈরি এই টুরকি গ্রাম গঞ্জে একনও জনপ্রিয়। গ্রামীন ছোট পরিবারে হাঁস মুরগি পালনের জন্য ব্যবহীত হয় বাঁশের তৈরি খাঁচা। জেলে সম্প্রদায়ের ব্যবহীত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খাড়ই। খাড়ইয়ের মধ্যে মাছ রেখে জেলেরা নিয়ে যায় গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারে। ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকা এসব দ্রব্য সামগ্রী আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ইত্যিমধ্যে হারিয়ে গেছে হরেক রকমের মোড়াচেয়ার, চালন ইত্যাদি। সরিকল  হাটে আসা বিভিন্ন এলাকার বাঁশ বেত শিল্প ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় তাদের কাছে ১০-১২ জন করে বাঁশ, বেত শিল্পের কারিগর ছিল।

তখন কার দিনে এক জন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন ১০০-১২০ টাকা। এখনকার দিনে সে কারিগরদের বেতন দিতে হয় ৩৫০-৪৫০ টাকা। তাও সিজনের সময় পাওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা জানান বাঁশ ও বেত শিল্পের জিনিসপত্রের দামের তুলনায় প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসের দাম খুব কম। বাঁশ দিয়ে যে মোড়া তৈরি করতে যে খরচ হত তার চেয়ে কম টাকায় প্লাস্টিকের মোড়া পাওয়া যায়। তানা আরো জানান, আগে একটি বাঁশ ক্রয় করা যেত ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় কিন্তু এখন একটি বাঁশ ক্রয় করতে গেলে ২০০-২৫০ টাকা দিয়েও পাওয়া কষ্টের।

আগরপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো: এবায়েদুল হক শাহীন বলেন, বাঁশ বেত শিল্পের তৈরি জিনিস পত্রের দাম এখনকার বাজারে বেশি আর বর্তমান সময়ে লোকজন কম মূল্যের প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দিকেই যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা ও উদ্দ্যোগের মাধ্যমে নদী বেষ্টিত দক্ষিণঅঞ্চলের বাঁশ, বেত শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। এমনটি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

Share.
Exit mobile version