বিশেষ প্রতিনিধি।। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে ১৫-২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বিহারি কলোনির আশপাশের এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

গত শুক্রবার আদমজী জামে মসজিদের ভেতর পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় রোববার রাতভর আদমজীর বিহারি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মুক্তির দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিহারি ক্যাম্পের কয়েকশ নারী-পুরুষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও এবং নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়ক অবরোধ করে। তারা থানা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়কে কাঠের চকি, ইটপাটকেল, বাঁশ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে, পুলিশের বিরুদ্ধে সেøাগান দেয়। ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে আদমজী ইপিজেডে প্রবেশ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা।

পুলিশ মাইকিং করে জানায়, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে তারা গ্রেফতার করবে না। এ সময় অবরোধকারীরা ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে’ বলে সেøাগান দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ও র্যাব তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষে বাঁধে। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। কয়েকশ শ্রমিকও বিহারিদের সঙ্গে যোগ দেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নতুন বাজার, পকেট গেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু জানান, সকালে লোকজন সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল ছুড়ে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও শতাধিক রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরুসহ ৫ পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন।

বিহারি ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বলেন, গত শুক্রবার মসজিদের ইমাম সাহেব ভারতের দুই নেতা নবীজি সম্পর্কে যে কটূক্তি করেছে তার সমালোচনা করছিল। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা ‘ভারতের বিষয় ভারতে থাক, এ নিয়ে এখানে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়’ এমন মন্তব্য করলে সাধারণ মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এর জের ধরে পরে পুলিশ ক্যাম্প থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।

উল্লেখ্য, ‘মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ভারতের বিষয়, এটি ভারতেই থাক, এর জের ধরে এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে না ঘটে’ পুলিশের এসআই সৈয়দ আজিজুল হক গত শুক্রবার জুম্মার সময় মসজিদের ভেতরে এমন সতর্কতামূলক মন্তব্য করলে মুসল্লিরা ক্ষেপে ওঠে তার দিকে জুতা ছুড়ে মারে এবং তাকে ব্যাপক প্রহার করে।

Share.
Exit mobile version