বিশেষ প্রতিনিধি।। আগামী রবিবার থেকে ফেরির নতুন ভাড়া কার্যকর হচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরিতে গাড়ি পারাপারে ২০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম এবং নৌযান মেরামতের ব্যয় বাড়ার কারণ দেখিয়ে নতুন এ ভাড়া আদায় করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। গতকালই ভাড়ার নতুন চার্ট বিআইডব্লিউটিসির মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির নৌযানের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব গত ১৯ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। প্রায় দুই মাসের মাথায় তা কার্যকর হতে যাচ্ছে। বাস মালিকেরা জানিয়েছেন, ফেরির নতুন ভাড়া কার্যকর হলে তা যাত্রীদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। তখন যাত্রীপ্রতি ভাড়াও বেড়ে যাবে।
বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, গত ৪ নভেম্বর জ্বালানি তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকেই আমরা ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আসছি। তেলের দাম বাড়ার কারণে ফেরির জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। এসব কারণে ব্যয় বৃদ্ধির সমন্বয় করতে ফেরির নতুন ভাড়া কার্যকর করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ছয়টি রুটে ফেরিতে গাড়ি পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিসি রুটগুলো হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজিরহাট, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার/মাঝিরকান্দি, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়া। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলগঞ্জ ও উপকূলীয় রুটে যাত্রীবাহী নৌযান পরিচালনা করে আসছে।
নতুন ভাড়া কার্যকরের পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে এক থেকে তিন টন পণ্যবাহী ছোট ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ৭৪০ থেকে বেড়ে ৯০০ টাকা হবে। তিন-পাঁচ টনের ট্রাক ৮৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা; পাঁচ-আট টন পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ১ হাজার ৬০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং ৮-১১ টনের বড় ট্রাক ও লরির ভাড়া ১ হাজার ৪৬০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৭৫০ টাকা দাঁড়াবে।
এ রুটের মিনিবাস বা কোস্টার পারাপারে ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা, মাঝারি আকারের বাস দিনে ১ হাজার ৫৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং বড় বাসে ১ হাজার ৮২০ টাকার স্থলে ২ হাজার ১০০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
এছাড়া মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৮০০ টাকার স্থলে ১ হাজার টাকা, পাজেরো গাড়ি ৭৩০ টাকার স্থলে ৯০০ টাকা, কার ও জিপ ৪৫০ টাকার স্থলে ৫৪০ টাকা, মোটরসাইকেল ৭০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
অন্যদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার বা মাঝিরকান্দি রুটে এক থেকে তিন টন পণ্যবাহী ছোট ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ৯৮০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা, তিন-পাঁচ টনের ট্রাক ১ হাজার ৮০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা; পাঁচ-আট টন পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং ৮-১১ টনের বড় ট্রাক ও লরির ভাড়া ১ হাজার ৮৫০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ২২০ টাকা দাঁড়াচ্ছে।
এ রুটের মিনিবাস বা কোস্টার ১ হাজার ২০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি মাপের বাস ১ হাজার ৭৮০ টাকার স্থলে ২ হাজার টাকা এবং বড় বাসে ১ হাজার ৯৪০ টাকার স্থলে ২ হাজার ২৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৮৬০ টাকার স্থলে ১ হাজার ৫০ টাকা, পাজেরো গাড়ি ৮০০ টাকার স্থলে ১ হাজার টাকা, কার ও জিপ ৫০০ টাকার স্থলে ৬০০ টাকা এবং মোটরসাইকেল ৭০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে অন্য চারটি রুটের ফেরিতে গাড়ি পারাপারের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। ফেরিতে শুধু যাত্রী পার হলে তার ভাড়া হবে ৩০ টাকা। এদিকে রবিবার থেকে বিআইডব্লিউটিসির লঞ্চ ও স্টিমারের ভাড়াও বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেসরকারি লঞ্চ ভাড়া প্রথম ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে দুই টাকা ৩০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের পরে প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। এই ভাড়ার হার এখন বিআইডব্লিউটিসির নৌযানেও প্রযোজ্য হবে।
বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এতে ফেরিতে গাড়ি পারাপার অনেক কমে যাবে। এমন অবস্থায় ফেরি ভাড়া বাড়িয়ে আয়ের প্রবাহ কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।