রাঙা প্রভাত ডেস্ক।। অতিমাত্রায় বৃষ্টি ও উঁচু অঞ্চল থেকে পানি আসলে ঢাকাও প্লাবিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
রোববার সচিবালয়ে এক বৈঠকের আগে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নিম্নাঞ্চল কিন্তু দ্রুত প্লাবিত হয়। আমরা এখনও সব কাজ করে ফেলতে পেরেছি, তা নয়। কিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে, উদ্ধারের কাজ আরও চলমান আছে।”
এ পর্যন্ত কয়টি খাল উদ্ধার করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সিটি করপোরেশনে মোট ২৬টি খাল হস্তান্তর করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সাড়ে ৬ একর জমি দখলমুক্ত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশন ২৫ একর দখলমুক্ত করেছে। এ কাজগুলো চলমান আছে।”
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট ও সুনামগঞ্জে আকস্মিক বন্যার বিষয়ে তাজুল বলেন, “বন্যা কী পর্যায়ে যাবে সেটার পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। যারা পূর্বাভাস দেয় তারা বলেছে, একটা আগাম সতর্কতা আছে। তবে সেটা কোন পর্যায়ে যাবে সেটি বলা হয়নি।”
ঢাকায় ১৯৮৮ সালের মত বন্যা হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “বন্যা হবে, কিন্তু কতটুকু হবে সেটির পূর্বাভাস কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের দেয়নি। ১৯৯৮ সালের বন্যাকে আমরা মোকাবেলা করেছি, আগেও বহুবার মোকাবেলা করেছি।
ফাইল ছবিফাইল ছবি“১৯৯৮ সালে বলা হয়েছিল ২ কোটি মানুষ মারা যাবে; কিন্তু একজনও মারা যায়নি। সে সময় মানুষ না খেয়ে মারা যায়নি। যেখানে যা করা দরকার সেটি করা হচ্ছে। তবে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। অপ্রস্তুত থাকা উচিত না। আমরা সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছি।”
জলাবদ্ধতাই বড় সমস্যা
স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণের বৈঠক ছিল এটি।
জলাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলো বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল। সেখানে অবকাঠামোগত সমস্যাও আছে, যা নিরসনের জন্য চার হাজার কোটি টাকার বেশি একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে, কাজটি শেষ হলে সেখানকার অনেক উন্নতি হবে।
“ঢাকা উত্তর,দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। তা নিরসনের জন্য ঢাকায় যতগুলো খাল আছে সেগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি, অনেকগুলো হস্তান্তরও করেছি।”
তাজুল ইসলাম বলেন, “খাল হস্তান্তরের সুফল আমরা ইতোমধ্যে ভোগ করছি। যদিও এসব খালের অনেক অংশ অনেকে দখল করে নিয়েছে, যা দখলমুক্ত করা অনেক কঠিন।”
সিঙ্গাপুর ও নিউ ইয়র্ক শহরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০২০ সালে সবাইকে মোবাইলে দেখিয়েছি, সিঙ্গাপুর কীভাবে পুরো প্লাবিত হয়েছে, সেখানে গাড়িগুলো নৌকার মত ভাসছিল। এরকম পরিস্থিতি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি।
রাজধানীর সায়েদাবাদে শুক্রবার দিনভর বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক। এ সড়কে কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ।রাজধানীর সায়েদাবাদে শুক্রবার দিনভর বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সড়ক। এ সড়কে কোমর সমান পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ।“নিউ ইয়র্কে দেখেছি, সাবওয়েতে পানি ঢুকে গেছে। সমস্ত নিউইয়র্ক কিন্তু প্লাবিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিষয়ে তো কেউই প্রস্তুত থাকে না। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।”
সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে তাজুল বলেন, “মাঝে মাঝে আমরা কখনও কখনও দুর্যোগ মোকাবেলা করি। এবারও আমাদের কিছু কিছু অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়েছে এবং প্লাবিত হওয়ার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের পাশে সর্বাত্মকভাবে অবস্থান করছেন।”
ঢাকা প্লাবিত হলে প্রস্তুতির ব্যাপারে তিনি বলেন, একশ অথবা ১১০ বছরে হয়ত এমন দুর্যোগ আসে। এ অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন সময় এমন দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে।
দুর্যোগের জন্য সব সময় প্রস্তুতি থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা মোকাবেলায় যুগ্ন সচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। পরে প্রয়োজনে পরিবর্তন করা হবে।
পানির চাপ কমাতে সড়ক কেটে ফেলার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যাতে সরে যেতে পারে এজন্য কয়েকটি রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। কিছু রাস্তা কাটার প্রয়োজন পড়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এতে পানি সহজে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও প্রয়োজন হলে আরও রাস্তা কেটে ফেলা হবে।”
বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ডেঙ্গুর বিষয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে উদ্যোগ নেই। এবারও সেটি করা হয়েছে। সকল প্রস্তুতি উভয় মেয়র নিয়ে রেখেছেন। যে সমস্ত কীটনাশক, ওষুধ, যন্ত্রপাতি দরকার তা তাদের কাছে মজুদ আছে।”
শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে এ বছর এখনও কেউ মারা যাননি। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে কোন মৃত্যু নাই। তবে ডেঙ্গুতে ভারতে একজন, ফিলিপাইনে ৩১ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ২২৯ জন, মালয়েশিয়ায় ৭ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। এসব দেশ থেকে আমরা ভালো আছি।”
“আমরা কিন্তু প্রস্তুত আছি। মানুষকে সচেতন করতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।