রাঙা প্রভাত ডেস্ক।। ঈদ এবং এর আগে ও পরে পাঁচ দিনে (শুক্রবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত) ২৩ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৫০ জনের বেশি। সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে সোমবার চট্টগ্রামের পটিয়ায়। সেখানে বাসের চাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার ছয় যাত্রী নিহত ও অন্তত সাতজন বাসযাত্রী আহত হয়।

নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী রয়েছেন। নিহত ৫১ জনের মধ্যে মোটরসাইকেলসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়।
পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ভাইয়ারদিঘি এলাকায় সোমবার রাতে দ্রুতগতির বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের অটোরিকশাকে চাপা দেয়। পটিয়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম ও পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোজাফফর আহমদ বলেন, নিহত ছয়জনই অটোরিকশাটির যাত্রী। তাঁরা হলেন চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের বিশ্বজিত সেন (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী রুপনা সেন (৪০), চন্দনাইশের গাছবাড়ীয়া বণিকপাড়ার শুভ ধর (২৭), পটিয়ার রশিদাবাদ গ্রামের সাব্বির হোসেন (১৬), কমলমুন্সির হাট এলাকার রেজাউল করিম ওরফে রফিক (৪৫), হুলাইন গ্রামের অটোরিকশাচালক মো. ইছমাইল (৫০)।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণপুরে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে ঈদের দিন রবিবার ভোরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মালবাহী পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশাটির চালকসহ তিনজন নিহত ও একজন আহত হন। নিহতরা হলেন অটোরিকশাচালক বেগমগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন হৃদয়, হাতিয়া উপজেলার আদর্শ গ্রামের মো. সোহেল ও আমজাদ হোসেন।

টাঙ্গাইলে দুই ভাইসহ ১১ জন নিহত

ঈদের আগে ও পরে টাঙ্গাইলে পৃথক পাঁচটি দুর্ঘটনায় সহোদর দুই ভাইসহ ১১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার রাবনা বাইপাসে দুজন, শনিবার বিকেলে কালিহাতীতে দুজন এবং ধনবাড়ীতে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে চারজন, সোমবার সকালে ঘাটাইলে দুজন ও মির্জাপুরে শনিবার সকালে একজন নিহত হয়।
রাবনা বাইপাসে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহতরা হলো নাটোরের নলডাঙ্গা থানার কাঠুয়াজানি গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার মেয়ে মৌসুমী (৩৫) ও তাঁর ভাগ্নি জামালপুরের টেংকিমারি গ্রামের রেজাউলের মেয়ে রিয়া মনি (৫)। এ ঘটনায় অটোরিকশার দুই যাত্রী আহত হন। কালিহাতীর সিংগুরিয়া ও চরভাবলা এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন জেলার গোপালপুর উপজেলার ভেড়াডাকরী এলাকার ঠাণ্ডু মিয়ার মেয়ে পোশাককর্মী লিমা আক্তার (২৫)। ধনবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী দুই ভাইসহ চারজন নিহত হন। শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়কের বানিয়াজান বাসস্ট্যান্ডের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জামালপুর সদরের তুলসীপুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ কর্মকারের ছেলে অটোরিকশাচালক বাবুল কর্মকার (৫০), রামনগর গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২), তাঁর ছোট ভাই মৃদুল হাসান (১৫) ও একই গ্রামের বজলুল মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১৯)।

ঘাটাইলের পোড়াবাড়ীতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে যাত্রীবাহী পিকআপে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গিয়ে দুজন নিহত ও চালকসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। নিহতরা হলো মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামের সৌরভ (১০) ও ধামাবাশরী গ্রামের রুপা খাতুন (০৭)। মির্জাপুর উপজেলার কারনী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসের চাপায় কুরনী গ্রামের হালিম মিয়ার (৭৫) মৃত্যু হয়।

কুমিল্লায় সাংবাদিকসহ নিহত ৮
কুমিল্লায় ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিনে মহাসড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হন। শনিবার দাউদকান্দির বেকিনগর গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিহতরা হলেন উপজেলার বেকিনগরের আবদুল হকের ছেলে মোটরসাইকেল আরোহী রাসেল আহমেদ (২৮), তাঁর চাচাতো ভাই একই গ্রামের শাহজালাল সরকারের বড় ছেলে মো. শরিফ সরকার (৩০) ও তৃতীয় ছেলে তাফসীর সরকার (১৮)। রাসেল কুমিল্লার দৈনিক সমাজকণ্ঠের দাউদকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি। গ্রাম থেকে কোরবানির মাংস নিয়ে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা কোটবাড়ী বিশ্বরোড এলাকায় ঈদের দিন বিকেলে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী চাচা-ভাতিজা নিহত হন। নিহতরা হলো বরুড়া উপজেলার নবীপুর গ্রামের মাকছাছুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা (৩৮) ও তাঁর ভাতিজা ফাহাদ হোসেন (৭)।

অন্যদিকে ঈদের দিন বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রাহেলা বেগমের (৪০) মৃত্যু হয়। তিনি নিমসার মৃত সেলিম মিয়ার স্ত্রী। একই দিন সদর উপজেলার আলেখারচর চক্ষু হাসপাতালের সামনে কাজি সাকিব হোসেন নামের এক তরুণের মৃত্যু হয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। মনোহরগঞ্জ উপজেলার মনোহরগঞ্জ-আমতলী এলাকায় গতকাল টিউবওয়েলে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সৌরভ হোসেনের (২৫) মৃত্যু হয়।

পটুয়াখালীর বাউফলের চন্দ্রদ্বীপের নিজ বাসার সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির আলী হাওলাদার (৬০) নিহত হন। সোমবার রাতে বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

রাজধানী ঢাকার শ্যামপুর থানাধীন পোস্তগোলা সেতুর ঢালে গতকাল দুপুরে রাস্তা পার হওয়ার সময় গ্রীন লাইনের বাসের ধাক্কায় সাইফুল ইসলাম (৪২) নামের এক ঠিকাদার নিহত হন। তিনি মাগুরার আজমপুর গ্রামের মো. ওয়াজেদ মোল্লার ছেলে। মিরপুরে সপরিবার থাকতেন। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের আজিমপুরে রবিবার রাতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে চালক প্রবাসী গাজিউর রহমান গাজীর (২৪) মৃত্যু হয়। তিনি নয়াডাঙ্গি কিটিংচর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।

মাদারীপুরের কালকিনির সমিতিরহাট এলাকায় সোমবার মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে চালক রিফাত বেপারী (১৮) নিহত ও দুই আরোহী আহত হন। রিফাত কালাই সরদারের চরের মো. খোকন বেপারীর ছেলে। ফরিদপুর সদরের চর জ্ঞানদিয়া এলাকায় বাড়ির সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে পাতা কুড়ানোর সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম (৪৭) নিহত হন।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মিতালি বাজার এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে আরোহী অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্র রাশেদুল ইসলাম (১৬) নিহত ও এসএসসি পরীক্ষার্থী চালক স্বাধীন (১৮) আহত হন। রাশেদুল বাউলপাড়া গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে।

নওগাঁর রাণীনগরের কুজাইল বাজারে রবিবার বিকেলে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একটির আরোহী পুলিশ সদস্য শাহী মোল্লা (৩৬) নিহত ও তাঁর স্ত্রী শিফনআরা (৩৬) গুরুতর আহত হয়েছেন। শাহী উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ওসমান মোল্লার ছেলে এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ি থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁরা কোরবানির মাংস নিয়ে আত্রাই উপজেলায় বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা-সায়বাড় রাস্তায় শনিবার সকালে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়ে ট্রলির সঙ্গে ধাক্কা লাগলে সেনাবাহিনীর সদস্য মেহেদী হাসান রবিন (২১) নিহত হন। তিনি উপজেলার ঝালুকা খড়িয়ালপাড়া গ্রামের দিনমজুর এনামুল হকের ছেলে। নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেইলি ব্রিজের পাশে গতকাল সকালে বিআরটিসির বাসচাপায় নিহত হন গাজীপুর গ্রামের ভ্যানচালক কছিম উদ্দিন (৬৫)।

শেরপুর শহরের গৃর্দানারায়ণপুরে শনিবার রাতে বাসচাপায় পথচারী রাজবল্লভপুরের বাসিন্দা সুবোধ মাস্টার (৬৮) নিহত হন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিবগঞ্জ টাউয়ারের মোড়ে গতকাল লরি চাপায় রিফাত (২০) নিহত হন। তিনি শিলাসী এলাকার রইছ উদ্দিনের ছেলে ও পেশায় রাজ জোগালি। তিনি ছয় মাস আগে বিয়ে করেন। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনা থানার সড়াবাড়িয়া-হরিশচন্দ্রপুর সড়কে রবিবার মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খেজুর গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে আরোহী এনামুল হক (২৫) নিহত হন।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নওয়াপাড়ায় বিরিশিরি-শ্যামগঞ্জ সড়কে সোমবার মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হন নলজোড়া গ্রামের আব্দুল হক (৬৮)। রাজবাড়ীর পাংশা শহরের কৃষি ফার্ম এলাকায় রবিবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজছাত্র আবু মুসার মৃত্যু হয়। সে পাংশার নারায়ণপুর কলেজপাড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে। অন্যদিকে শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কের সদর উপজেলার বাগমারা এলাকায় বাসচাপায় স্থানীয় সাগর ফ্লাওয়ার মিল মসজিদের ইমাম মাওলানা কাজী মোর্তজা আজম জিলানী নিহত হন।

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের বাজনাহার এলাকায় দিনাজপুর-সেতাবগঞ্জ সড়কে রবিবার রাতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে এক যুবক নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। নিহত মুনায়িম সাঈদি উপজেলার ছটকুরমোড় এলাকার মৃত মোকসেদ আলীর ছেলে।

এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় সিংড়ায় এক মিষ্টি ব্যবসায়ী, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় ও বেজগাঁওয়ে দুজন (আহত ১০), ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ডে একজন, বরিশালের গৌরনদী ও উজিরপুরে দুজন এবং ভোলার দৌলতখান উপজেলায় একজন নিহত হয়। পাবনার চাটমোহরে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় একটি বাস উল্টে খাদে পড়ে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। রবিবার দুপুরে উপজেলার বামনগ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

Share.
Exit mobile version