মুক্তি মিলবে কবে, বলতে পারছে না কেউ * ৮টার পর দোকান খোলা রাখলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

বিশেষ প্রতিনিধি।। 

একটানা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎবিভ্রাট যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে ঢাকায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল মানা হলেও অন্য কোথাও মানা হচ্ছে না।

ঢাকার বাইরে খেয়ালখুশিমতো লোডশেডিং করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলছেন, ‘বিদ্যুৎ এখন যায় না, মাঝেমধ্যে আসে।’

লোডশেডিংয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর অনেক এলাকায় অসহনীয় বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দেয়। কোনো কোনো এলাকায় চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। কিছু এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের দেখা মেলেনি।

তবে রাজধানীর চেয়ে মফস্বলে পরিস্থিতি বেশি খারাপ। কোথাও কোথাও দিনের বেশির ভাগ সময় ছিল বিদ্যুৎহীন। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে। লোডশেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিমাগারের পণ্যের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চিকিৎসা, শিক্ষা, ও কৃষিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। আউশ ও রোপা আমনের খেতে সেচসংকট দেখা দিয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পকারখানায় স্থবিরতা নেমে এসেছে।

ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোর ওয়েবসাইটে দেওয়া শিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং করা হচ্ছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধে মাইকিংও করছে। কখন কোথায় বিদ্যুৎ থাকবে না ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ তা জানিয়ে দিচ্ছে। আরইবি সূত্র জানায়, দিনের বেলায় আগে থেকেই তারা চাহিদার ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছিলেন। এখন সন্ধ্যার পরও বিদ্যুৎ কম দেওয়া হচ্ছে।

রাতে অন্তত তাদের দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সূত্র আরও বলছে, তাদের সারা দেশে প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি ফিডার রয়েছে। এগুলোকে ভাগ করে কোথায় কখন কতটুকু লোডশেডিং করা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা লোডশেডিংয়ের তালিকা করে সেই অনুযায়ী লোড ম্যানেজমেন্ট করবে।

যুগান্তরের পুরান ঢাকা প্রতিনিধি জানান, পুরান ঢাকায় প্রতি ঘণ্টায় কোনো না কোনো এলাকায় লোডশেডিং চলছে। এতে ছোট-বড় শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকরা অলস বসে থাকছেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে পুরান ঢাকার চকবাজার, বংশাল, কোতোয়ালি, নবাবপুর, ইসলামবাগ, পোস্তাসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দেয়।

ইসলামবাগের প্লাস্টিক কারখানার মালিক আমিরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুদফায় এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না। এতে শ্রমিকদের অলস বসে থাকতে হচ্ছে। ইংলিশ রোড বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের কমপ্লেইন সুপারভাইজার এম সায়েম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের অপ্রতুলতায় প্রতি ঘণ্টায় কোনো না কোনো এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বাড়ির পাশে খোলা জায়গা, বারান্দায় বসে সময় কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। দোকানপাটে মোমবাতি বা চার্জলাইট জ্বালিয়ে বেচাকেনা করতে দেখা যায়।

কাজলা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম যুগান্তরকে বলেন, সরকারি অফিস-আদালতসহ অনেক জায়গায় অহেতুক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে।

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। অসহনীয় গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। এদিকে রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অনেকে।

চালাবন্দে বসবাসকারী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, তিন দিন ধরে রাত ১০টার পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ঘণ্টাখানেক পর আসছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত ২টার দিকে আসে।

বিদ্যুতের অভাবে ডেমরা এলাকায় গভীর নলকূপের পানি তোলা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে স্থানীয়রা চরম বিপাকে পড়েছে। গৃহস্থালির কাজেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে গৃহিণীদের। তাদের অভিযোগ, এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করা লোডশেডিং আমাদের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

ডেমরা থানা এলাকায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ৭০ মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গৃহিণী আফরিন সুলতানা বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে সময় নির্ধারণ করে লোডশেডিং দেওয়ার বিষয়টি হাস্যকর।

বিদ্যুৎ বিভাগ ডেমরা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শ্রীবাস চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার পরিকল্পনা থেকে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

নেত্রকোনার এক বাসিন্দা জানান, সোমবার রাত ১২টা থেকে দুপুর ৩টা; এ ১৫ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচবার আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা মেয়াদে বিদ্যুৎ ছিল না। মাগুরা জেলার এক বাসিন্দা জানান, দিনে সাধারণত বেশ কয়েকবার করেই লোডশেডিং পাই আমরা। এখনো একই আছে। সন্ধ্যার পরও কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়।

মাগুরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সন্তোষ কুমার ঘোষ জানান, আমরা যতটা পারছি লোড ম্যানেজমেন্ট করছি। দিনে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছি। রাতে যা পাচ্ছি তা দিয়ে দুবার দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা দেখলেই বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন : রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা দেখলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া শুরু হয়েছে। জ্বালানি সংকটের এই সময়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার নিজের ভেরিভায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

দেশে সোমবার থেকে স্থগিত করা হয়েছে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ ছাড়া এখন থেকে সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকবে পেট্রোল পাম্প। এমন বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পাশাপাশি অফিসের সময়সূচি দুই ঘণ্টা কমানোর চিন্তা চলছে।

পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ রাখা, আলোকসজ্জা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে সোমবার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ না করা হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এরপর রাত থেকেই অভিযান শুরু হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিকালে নিজের ফেসবুক পেজে জানান তিনি। ফেসবুক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা থাকলে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করা হবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে।

সোমবার রাত থেকে এ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালিত করে ডিপিডিসির টিম। তারা প্রথমে মাইকে লাইট বন্ধ করার অনুরোধ করেন।
এদিকে পাবনার অবস্থা আরো ভয়াবহ এমনিতে বিপর্যয় চলছে বেশ কিছুদিন ধরে নেমে এসেছে হতাশা সারা পাবনা বাসীর।

Share.
Exit mobile version