সাইরেন বাঁজে
–উৎপল চক্রবর্তী
নিখিলেষ আমার ক্লাসমেট
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।
ক্লাসে তেমন একটা উপস্থিতি নেই।
সারাদিন শুধু পাতার বাঁশি বাজিয়ে
চলে গ্রামের পর গ্রাম।।।
কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলে সাইরেন বাজাই,
কিসের সাইরেন??
বলে জানিনা।
বাবা-মা , ভাই – বোন, বন্ধুরা বলে,
নিখিলেষ তোর জীবনের লক্ষ্য কি??
নিখিলেষ মুচকি হেসে বলল আমি রৌদ্দুর হবো,
আমার বুকের ভিতর একটা সাইরেন বাজে,
সাইরেন টা সবাই শুনবে,
মা,বলে পাগল ছেলে আমার, বাবা বলে অপদার্থ
ভাই -বোন, বন্ধুরা বলে তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।।
নিখিলেষ সকলের কথায় ব্যথিত হয়ে, চাকরি নিল
একটি আর্ট প্রেসের কারখানার শ্রমিক হিসেবে,
মাঝে – মধ্যে সেই পাতার বাঁশি বাজিয়ে চলে আনমনে
অন্য শ্রমিকেরা কেউ জিজ্ঞেস করলেই
বলে সাইরেন বাজাই, সাইরেন, শুনবে আমার সাইরেন।
কলিগ শ্রমিকরা বলে বদ্ধ উন্মাদ, লক্ষ্যহীন উড়নচণ্ডী,
ভৎসনার সহিত বলে রোদ্দুর হবে, সাইরেন বাজাই।।
পাগলের গারোদ।।
হঠাৎ একদিন বলে উঠলো শুনছো তোমরা আমার সাইরেন বেজে ওঠেছে, এবার আমি রোদ্দুর হবো।
কাঁধে রাইফেল নিয়ে বলল যুদ্ধে যাই মা আশীর্বাদ করো
মা- বলল পাগল ছেলে, বাবা অভিমানের সুরে রাগে বলল তোমাকে চাইনা দেশের জন্য যাও তাই দেশ চাই, তোমাকে নয় এই বলে বাবা কেঁদে দিয়ে চোখ মুছতে – মুছতে চলে গেলো।
ভাই – বোন বন্ধুরা প্রেমিকা বলল, দেশ স্বাধীন হলে কি না- হলেই বা কি, আমরা তো ভালো আছি ।।
নিখিলেষ সকলের উদ্দেশ্যে বলল আমার ছেলে স্বাধীন সূর্যের আলোর রৌদ্রস্নাত গালিচায় নির্মল বাতাসে বুক ভরা নিশ্বাস নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম হেটে চলবে মুক্ত চিন্তায় পাতার বাঁশি বাজিয়ে।।
নিখিলেষ যুদ্ধে চলে গেলো, ফিরে আসেনি,
নিখিলেষের ইচ্ছে ছিল রোদ্দুর হবে, কিন্তু সে রোদ্দুর হয়েছে কিনা জানিনা তবে সে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে ।।
নিখিলেষ আজ স্বাধীন বাংলাদেশের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা।।
————————————————————————–