(১)
বধুবেশী কান্না
মৃত্যুর খোঁজে আজ জীবন বিলিয়ে দিয়েছি,
মরণ যন্ত্রণা যেখানে সাত সাগরের ঢেউ হয়ে বাজে…
সেখানেই ব্রহ্মস্নানে ব্যস্ত সাধক আমি।
সেদিন কি ছিল না আমার! কি ছিল না পৃথিবীর?
বিশ্বটা যখন সবেমাত্র হামাগুড়ি দিতে শিখেছে —
হৃদয়ে আমার তখন প্রণয় সন্ধিক্ষণের মহা উল্লাস।
আর তুমিই ছিলে পৃথিবীর সবচেয়ে যৌবনবতী নারী!
সৌন্দর্যে ছিল তোমার —
মেঘভেদী বিদ্যুতের বেগের মতো সীমাহীন স্নিগ্ধতা ;
সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মত ছিল আমার প্রবল আবেদন।
ইচ্ছে করলে— এ জীবন কাব্যের প্রচ্ছদ আপন হাতেই এঁকে দিতে পারতে,
হ্যাঁ, তুমিইতো ছিলে শাশ্বত কালের শ্রেষ্ঠ চিত্রকর!
অথচ এ জীবনে তোমার দেখা মিলল না…।
অনাবৃত স্মৃতিগুলো যখন চরম উদ্যমে জীবন খুঁজে পায়,
আমাকে তখন মৃত্যুর বুদবুদ হতে বিশ্বাস নিয়ে জীবনের স্বাদ পেতে হয়।
অস্তিত্বের শিরা বেয়ে গড়িয়ে পড়া দু-এক ফোঁটা লোনাজল,
তা-ই যেন আজ আমার একমাত্র সম্বল ।
আজ কেবলই জন্মান্তরের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি,
হই যেন জাতিস্মর….!
দুনিয়ার সমস্ত আদিম কাব্যে আনবো ছন্দপতনের হাহাকার,
তাবৎ হৃদয়ের ভালোবাসাকে রাখবো চির রক্ষিতা।
হৃদয়ের বাসিন্দা হয়ে হৃদয় জুড়ে তুলব নির্দয় মরুঝড়!
তারপর জীবনের রং আর মরণের রঙে একে যাব আলপনা নীল আকাশের বুকে,
যেখানে বধূবেশে ঝংকার তুলবে আমার হাজার জনমের কান্না।
(২)
কপট স্পন্দন
বুকে যেন আলাদা নিঃশ্বাসের অজানা স্পন্দন,
পাড়ভাঙা স্রোতের মতো সব কেড়ে নেয়।
অচেনা কালপুরুষ পেরেক ঠুঁকে টাঙ্গিয়ে চলে রংতামাশার কপট দলিল!
অবাধ্যতার পিছু ছুটে বুকের মধ্যে ধরে রাখি উদ্বাস্তু হৃদয়,
দলছুট জলমেঘ বসতি চেয়ে পাঁচিল টানে চোখের কোণায়।
আঙুলের ডগার স্পর্শতিলক আজ —
আগুন হয়ে তেড়ে আসে খেয়ালি নেশায়,
গুহা চিত্রের মত সময় কে বেঁধে রাখতে
খুঁজেছি সাগরে কত প্রতিশ্রুতির ঢেউ।
অথচ, জল বসন্তের মতো ভরাট যৌবন দেখে—
হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসে কামান্ধ রীতি,
মুমূর্ষু বেদী পরে তৃষ্ণায় ছাতি ফাটায় মানবতার কোনো জন্মান্ধ দেবতা ।
বেখেয়ালি নিঃশ্বাস টেনে হাতড়ে চলি বুক;
যেখানে জমা পড়ে আছে কত অজস্র যন্ত্রনা,
রাতকে কচলে আরো বেশি গাঢ় করে তুলি,
সকালটা যদি একটুখানি কাছে এসে দাঁড়ায়।
(৩)
মানবতার ডাক
তোমার চোখে দেখছো তুমি- আমার চোখে আমি,
তোমার আমার ভাবনা সেতো যার যার কাছে দামি।
তবে কেন অন্যের ভাবনার করছো অপমান!
আমায় অপমানে তোমার বাড়ে কি সম্মান?
মানুষ বিনা যত প্রানি তাদের দিকে চাও,
উড়ছে ঘুরছে একই সাথে দেখতে কি তা পাও?
মানুষ হয়ে হিংসার পারদ উঠাও উপর নীচে,
তা হলেতো মানুষ নামের অহংকারটাই মিছে!
তারচে’ এসো একসাথে দিই মানবতার ডাক,
ধর্ম-বর্নের বিভেদ দিয়ে খুঁজবো না ফারাক।
মানুষ হয়ে দাঁড়াও যদি মানুষেরই পাশে,
দেখো সজীব দৃষ্টি তুলে
সকল দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে
ভালবাসায় পৃথিবীটা কেমন রঙিন হাসে।।