বিশেষ প্রতিনিধি।। ডেঙ্গুতে দেশে এ বছর সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৫০ সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। ফলে মশা এখন রাজধানীবাসীর জন্য ভীষণ এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরজুড়েই থাকবে এই ডেঙ্গু-আতঙ্ক। এর মধ্যে নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে কিউলেক্স মশা। তারা অবশ্য এ-ও বলছেন, চলতি নভেম্বরের শেষদিকে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কিছুটা কমতে পারে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, সিটি করপোরেশন যে কীটনাশক ব্যবহার করছে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই কার্র্যকারিতা হারিয়েছে। সে জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কীটনাশক পরিবর্তন করা দরকার। তিনি আরও বলেন, এডিস মশা নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কমতে শুরু করবে। তবে একেবারে শেষ হবে না। এবার এডিস মশা কমে যাওয়ার হার গত বছরের তুলনায় খুবই কম।
রাজধানীর অধিকাংশ নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ, বেসমেন্ট ও গাড়ি ধোয়ার স্থান ডেঙ্গু মশার প্রজননক্ষেত্রে
পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের তেমন নজরদারি নেই। ফলে এডিস মশার বিস্তার বছরজুড়েই থাকতে পারে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, যেহেতু বৃৃষ্টি হয়নি, তাই আরও কয়েকদিন ডেঙ্গু থাকবে। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মশা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নতুন করে বাড়বে কিউলেক্স মশা। কারণ এসব মশা শীতকালে বেশি জন্মায়। এ জন্য কিউলেক্স মশার প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তবে আমরা এডিসের পাশাপাশি কিউলেক্স দমনেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ডোবা, নালা, নর্দমা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কীটনাশক প্রয়োগের আগে ডিএনসিসির নিজস্ব ল্যাব, আইইডিসিআর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করি। কাজেই কীটনাশক কার্যকর নয়- কথাটি ঠিক নয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, কিউলেক্স মশা এরই মধ্যে বংশবিস্তার শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আছে। ঢাকা দক্ষিণে ডেঙ্গুু পরিস্থিতি শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে এডিস মশা দ্রুত কমে যাবে। তিনি বলেন, আশা করি ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি, কিউলেক্সটাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কীটনাশকের মান নিয়ে তিনি বলেন, ‘কীটনাশক কার্র্যকর নয়, এমন অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা কীটনাশক প্রয়োগের আগে ফিল্ড টেস্ট এবং ল্যাবরেটরি টেস্ট করে দেখি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি যে কীটনাশক প্রয়োগ করে, তা আন্তর্র্জাতিকভাবে পরীক্ষিত এবং শতভাগ কার্র্যকর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি কীটনাশক একই স্থানে তিন থেকে চার বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে এর কার্র্যকারিতা কমে যায়। তখন ওই কীটনাশকে মশা দমন করা যায় না। সিটি করপোরেশন যে কীটনাশক ব্যবহার করছে, সেগুলোর কোনোটি এরই মধ্যে তিন-চার বছর পেরিয়ে গেছে। এ কারণে নতুন কীটনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটা এডিস মশার ডিম ৭ থেকে ১০ দিনে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তর হয়। একটা এ মশার ডিম কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত টিকে থাকে। পানি পেলে সঙ্গে সঙ্গে ডিমগুলো থেকে লার্ভা সৃষ্টি হয়। একটি লার্ভা ৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশার আগের ধাপ অর্থাৎ ‘পিউপা’য় রূপান্তর হয়। একটি পিউপা পানিতে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপলাভ করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, মশা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর উপায় এর উৎসস্থল ধ্বংস করা।

Share.
Exit mobile version