শাহাবুদ্দিন মোড়ল, (ঝিকরগাছা) যশোর : শোরের ঝিকরগাছা রেলস্টেশনটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। জনগণের অসচেতনতা, কতৃপক্ষের উদাসীনতা আর বাজারে গনশৌচাগারের অভাবেই এমনটা হচ্ছে বলে স্হানীয়দের দাবি। যশোরের পরেই ঝিকরগাছা বাজার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম বাজার। এর উত্তরে যশোর, দক্ষিণে শার্শা, পূর্বে মনিরামপুর আর পশ্চিমে চৌগাছা উপজেলা অবস্হিত।

ভৌগলিক দিক দিয়ে চার উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় এই উপজেলা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। ব্রিটিশ আমলেই ঝিকরগাছায় রেলস্টেশন স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার পর কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি পুনরায় চালু করা হয়। এখন এই রুটে নিয়মিত ঢাকা – কলিকাতা, ঢাকা – বেনাপোল, খুলনা – বেনাপোল ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ঝিকরগাছায় একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয় ২০২০ সালে। দৃষ্টি নন্দন স্টেশন, আর খোলামেলা প্লাটফর্মে ঝিকরগাছার অসংখ্য মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকাল সন্ধ্যা হাটাহাটি করে। অনেকে আবার সময় কাটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসে।

কিন্তু বর্তমানে এই দৃষ্টি নন্দন স্টেশনে কেউ আসলে তাকে ময়লার দুর্গন্ধে নাক ঢেকে আসতে হয় আর জনগণ যখন তখন, যেখানে সেখানে মুত্রত্যাগ করায় চোখও ঢাকতে হয়।

সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় রেলস্টেশনের দক্ষিণ – পশ্চিম এবং উত্তর – পূর্ব পাশে কাঁচাবাজার, মাছ বাজার সহ সারা বাজারের উচ্ছিষ্ট ময়লা আবর্জনা গাদা মেরে রাখা হয়েছে। দুর্গন্ধের কারনে পাশ দিয়ে হাটা যাচ্ছে না। স্টেশনের লাগোয়া পরিত্যক্ত বিল্ডিং আর রেললাইনের ধার দিয়ে মানুষ অনবরত মুত্রত্যাগ করতে আসছে।

এখানে মুত্রত্যাগ করতে আসা ঝিকরগাছা বাজারের একজন ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল সাঈদ বলেন, ঝিকরগাছা বাজারে প্রায় ৫ হাজার দোকান আছে। প্রতিদিন প্রায় একলক্ষ মানুষ এই বাজারে যাতায়াত করে। কিন্তু এই বাজারের মার্কেট গুলোতে বাথরুম নেই, আর পৌরসভার গণশৌচাগার আছে মাত্র একটি। আবার তাতে প্রসাব করতে গেলে ৫ টাকা দেওয়া লাগে। সারাদিনে চারবার আসলে ২০ টাকা খরচ। এজন্যই লোকলজ্জার মাথা খেয়ে স্টেশনে খোলা জায়গায় প্রসাব করতে আসি। একই কথা জানালেন আরও কয়েকজন।

স্টেশনের সাথেই গাড়ি পার্কিং এর জন্য দুপাশে দুটি পাকা পাচিল দিয়ে ঘেরা চত্বর আছে। কিন্তু সেখানেও গাড়ি পার্কিং করার কেনো বাইসাইকেল রাখারও উপায় নেই। দক্ষিণ পাশের জায়গায় ছাই আর কয়লার স্তুপ এবং উত্তর পাশে ময়লা আবর্জনায় ঠাসা দেখা যায়।

এছাড়াও স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে একটি কফিশপের চেয়ার টেবিল বসিয়ে জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। স্টেশনের প্রবেশের গেটের মুখে আর বারান্দায় সারাদিন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা সুইপাররা আড্ডা দেয়। তারা জানায়, কাজের ফাঁকে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর বাজারে বিশ্রামের কোনো জায়গা না থাকায় আমরা এখানে বসে থাকি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা রেলস্টেশন মাস্টার পারভিনা সুলতানা বলেন, স্টেশনে ময়লা না ফেলতে এবং ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে আমরা পৌরসভার মেয়রকে মৌখিক ভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু পৌরসভা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আগামীকাল লিখিতভাবে জানানো হবে।

এদিকে স্টেশনে সপরিবারে মর্নিং ওয়াক করতে আসা ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি জাহিদ হাসান বলেন, প্রায় প্রতিদিন এখানে হাটতে আসি। কিন্তু যেখানে সেখানে মুত্রত্যাগ করতে বসা মানুষের জন্য মাঝে মাঝে স্ত্রী আর কন্যা নিয়ে লজ্জায় পড়ে যেতে হয়।

স্থানীয় জনগণ ঝিকরগাছা স্টেশনকে ময়লা আবর্জনা মুক্ত করতে এবং বাজারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণশৌচাগার স্হাপনের দাবি জানিয়েছেন।

Share.
Exit mobile version