আনোয়ার হোসাইন, সিলেট।। সিলেট কে বলা হয় পর্যটনের নগরী।  পর্যটনের সিলেট। কিন্তু পর্যটনের সিলেটে পর্যটক বান্ধব পরিবেশ শতভাগ নিশ্চিত হয়নি। জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়ার পরিবেশ এখনো আগের অবস্থানে ফিরেনি। এ সব পর্যটন এলাকায় এখনো অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়নি। প্রকৃতির উপর অনাচার চলছে। পরিবেশ সুরক্ষিত করা হয়নি। স্ট্রোন ক্রাশারের জন্যে আলাদা জোন গড়ে তোলা হয়নি। অন্যদিকে, পাহাড় কাটা, ইট ভাটার মাটি ব্যবহারে অবাধে ফসলী জমি নষ্ট করা, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় করনীয় উদ্যোগ যথাযথ  কার্যকর নেই।

জানা যায়,জাফলং, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, লোভা ছড়া সেখানে ২০১৭ সাল থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা বলবত রয়েছে। তবে, বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে প্রতিদিন যে পরিমানে প্রচুর পাথর উত্তোলন চলছে,তাতে কোন কোন মহল সন্তোষ থাকতে পারছেন না। এই প্রভাবশালী মহল বিগত ভয়াবহ কালের মত বোমা মিশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্যে আবারো সরকারী অনুমতি সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে।

স্থানীয়দের অভিমত, এ সব  স্থান সমুহে এখন যদি কোন ভাবে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়,তাহলে শুধুমাত্র পাথর জমা স্থান দখল নিতে অনেক প্রাণহানি ঘটতে পারে। আর  বোমা মিশিন ব্যবহারে অনুমতি কোন ভাবে মিললে  আগামী ২০/২৫ বছরের মধ্যে জাফলং, শ্রীপুর, বোর্ড স্কুল, বিছনাকান্দি, ভোলাগঞ্জ, উতমাছড়া,লোভাছড়া বলতে তেমন কোন অস্তিত্ব  খোজে পাওয়া মুশকিল হবে। 

অপরদিকে, সিলেট সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শুধুমাত্র গোয়াইনঘাটের উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ গোঠা উপজেলায় ক্যান্সার সহ  নানা মরন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ১৩০জন। খুবই ভয়ানক এই রিপোর্টে সচেতন মহল অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিগত দিনে বালু পাথরের অসহনীয় ক্ষতিকর ধোয়া,শত শত ক্রাশার মিলের ক্ষতিকর ধোয়া ও বিকট শব্দ দুষন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে এর কারণ খতিয়ে দেখার  কথা তারা বলছেন। যা সিলেটের অন্য কোন উপজেলায় এ ধরনের এত সংখ্যক মরণ ব্যাধি রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে,দীর্ঘদিন থেকে সিলেটের পর্যটন উন্নয়ন ও পরিবেশবাদী সংগঠন সমুহ পর্যটক বান্ধব পরিবেশ ও সড়ক যোগাযোগে টেকসই উন্নয়নের দাবী জানিয়ে আসছে। সিলেট পর্যটন উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা সংগঠন-এস টি জি এর পরিচালক একে নিউজের সাংবাদিক আনোয়ার হোসাইন বলেন, সিলেটে গেজেটভুক্ত বিপদ জনক জোনে পরিবেশ  বিধ্বংসী শ্রমিক নিহতের কোয়ারী সমুহে পাথর উত্তোলনের জন্যে প্রভাবশালী বোমা মিশিন চক্র সব সময় সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসন কে এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।  অপরদিকে, এখনো গোয়াইনঘাট উপজেলা কে “পর্যটন উপজেলা ” ঘোষণা  করা হয়নি। দাবী ছিল, অবিলম্বে এই উপজেলা কে পর্যটন উপজেলা ঘোষণা করা এবং অপরাপর সকল পর্যটন স্থান সমূহে প্রয়োনীয় টেকসই উন্নয়ন কাজ করা। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে আভ্যন্তরীন পর্যটক সংখ্যা ১কোটি ৬০ লক্ষের উপরে। সিলেটের পরিবহন, হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, পর্যটক গাইড,ফটোগ্রাফার,মাঝি সহ নানা শ্রমজীবিদের জন্যে সিলেট পর্যটন খাত হতে পারে দৈনন্দিন  আয়ের বড় ধরনের একটি উৎস।

গেল বছর ১১ নভেম্বর এ সব পর্যটন এলাকা পরিদর্শনে আসেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে যুগ্ম সচিব নায়েব আলী, ভূতাত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান, খনিজ সম্পদ উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তারা বালু পাথরে ভরাট হয়ে যাওয়া পিয়াইন সহ নদী সমুহের ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনতে, পর্যটক বান্ধব পরিবেশ উন্নয়ন ও স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বিষয়ে মতামত দেন। কিন্তু, পর্যটনের সিলেটে পর্যটক বান্ধব পরিবেশ এখনো শতভাগ নিশ্চিত করা হয়নি।

Share.
Exit mobile version