বরিশাল প্রতিবেদক।। ইউপি সদস্যর অব্যাহত কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য উপজেলায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করেও রেহাই পাননি মাদ্রাসা পড়–য়া দুই সন্তানের জননী এক প্রবাসীর স্ত্রী। ইউপি সদস্যর রোষানলে ওই নারীর ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে।
পরবর্তীতে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও ধারণ করার পর তার ভাড়াটিয়া বাসায় ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী ওই নারী। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার হ্যালিপ্যাড সংলগ্ন শাহাদাত হোসেনের বাড়িতে প্রবাসীর স্ত্রীর ভাড়াটিয়া বাসায়।
রবিবার সকালে আগৈলঝাড়া উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নিকট স্বজনদের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী লাকী বেগম অভিযোগ করে বলেন, বার্থী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য করিম লস্কর দীর্ঘদিন থেকে তাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এতে সে রাজি না হওয়ায় কয়েক দফায় তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ওই ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই ইউপি সদস্যর রোষানলে তিনি (লাকী) বার্থী এলাকা ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার হ্যালিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। এরইমধ্যে একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও ইউপি সদস্য করিম লস্কর কর্মস্থলের সুবাধে ইতালি চলে যান। প্রায় ছয় মাস পর গত ১০/১২ দিন পূর্বে সে (ইউপি সদস্য) ইতালি থেকে দেশে আসেন।
লাকী বেগম অভিযোগ করে আরও বলেন, ইউপি সদস্য করিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুইটি মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করা হলেও রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছেন না। বিষয়টি তিনি (লাকী) অতিসম্প্রতি গৌরনদীতে আসা জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এতে তার (প্রবাসীর স্ত্রী) ওপর আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউপি সদস্য করিম।
লাকী বেগম বলেন, অতিসম্প্রতি আগৈলঝাড়ার ভাড়াটিয়া বাসায় ফরিদপুর থেকে আমার ধর্ম মা বেড়াতে আসেন। গত ২৫ জানুয়ারি আমার ধর্ম ভাই মাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার বাসায় আসেন। ওইদিন রাত নয়টার দিকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া এলাকার ২০/২৫জন যুবক জোরপূর্বক আমার বাসায় প্রবেশ করে। এসময় ওই যুবকেরা আমার সামনে বসেই ইউপি সদস্য করিম লস্করকে ফোন করেন। পরবর্তীতে ইউপি সদস্যর নির্দেশে আমার ধর্ম ভাইয়ের সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক আছে দাবী করে তারা আমাকে এবং আমার ভাইকে অমানুষিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমি (লাকী) পতিতাবৃত্তি করি মর্মে করিমের লোকজনে স্বীকারোক্তি দিতে বলে। এই মিথ্যে স্বীকারোক্তি দিতে আমি অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীরা আমার এবং ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমার ভাইকে জবাই করতে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি তাদের কাছে মিথ্যে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হই।
লাকী বেগম আরও বলেন, এই মিথ্যে স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করার পর ইউপি সদস্য করিমের লোকজনে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা আমার বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। কান্নাজড়িত কন্ঠে লাকী বেগম আরও বলেন, আমার দুইটা সন্তান মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। আমি এই মিথ্যে স্বীকারোক্তি না দেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা অমানুষিক নির্যাতন করে আমার কাছ থেকে জোরপূর্বক মিথ্যে স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও ধারণ করে এখন চাঁদা দাবি করছে। বর্তমানে ওইসব চাঁদাবাজদের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় তারা জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে রাখা আমার বক্তব্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে সন্তানদের নিয়ে আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অসহায় লাকী বেগম পুরো ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য করিমসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে ইউপি সদস্য করিম লস্কর বলেন, একটি মহলের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আগৈলঝাড়ার ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।