বিশেষ প্রতিনিধি।।আপনার মিটার চুরি হয়েছে, মিটার পেতে এই নম্বরে কল করুন- এমন বার্তা চুরি হওয়া মিটারের নিচে সাঁটিয়ে রেখে যাচ্ছে নাটোরের সংঘবদ্ধ চোর। চিরকুটে থাকা নম্বরে ফোন করলে মিটার ফেরত দেয়ার শর্তে চাওয়া হচ্ছে টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়ে মিটার কোথায় পাওয়া যাবে সেটিও বলে দেয় চোরেরা। গত এক সপ্তাহে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২২টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিস ও গুরুদাসপুর থানায় এ প্রসঙ্গে একটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সজিব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী।

সজিব হোসেন বলেন, দুই বছর আগে সেচ প্রকল্পের জন্য বাড়ির সামনে একটি বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু, গত এক বছরে চারবার সেই মিটার চুরি হয়েছে। চুরির পর চুরি হওয়া মিটারের নিচে চিরকুট রেখে যায় চোরচক্র। সেই চিরকুটে দেয়া থাকে চোরদের মোবাইল নম্বর। সেই নম্বরে ফোন দিলে মিটার ফেরত দেয়ার শর্তে ৫ হাজার টাকা দাবি করে চোরেরা। অনেক অনুরোধ করার পর গত তিনবার দেড় হাজার টাকা করে বিকাশের মাধ্যমে দেয়ার পর মিটার ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা। টাকা দেবার পর চুরি হওয়া মিটার কোথায় আছে সেই স্থান বলে দেয় চোরেরা। একই কায়দায় গত ২৪ জুলাই রাতে আবারও মিটার চুরি হয় আমার। পূর্বের মতোই চিরকুটে দেয়া নম্বরে কল দিলে আবারও ৫ হাজার টাকা দাবি করে চোরেরা। এবার কিছু টাকা কম নেয়ার অনুরোধ করলে তারা বলে যে, ‘আরে ভাই এতো পরে ফোন দিছেন কেন? চারজন মানুষ সারারাত পরিশ্রম করেছি, কম হলে হবে না। অন্তত ৪ হাজার টাকা দেন, না হলে বিরক্ত কইরেন না।’ এরপরে অনেক অনুরোধের পর ২ হাজার টাকা চোরদের বিকাশ নম্বরে পাঠাই। টাকা পাঠানোর পর তার বাড়ির পাশে লেবু বাগানের ঝোঁপের মধ্যে মিটার রাখা আছে বলে জানায়। মিটার উদ্ধার করে পুনরায় সংযোগ নেয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুত অফিসে আবেদন করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে এসেছি।

চুরি যাওয়া আরেক মিটারের মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ধান ভাঙ্গানো মিলের মিটার চুরি হয়েছে। এর আগেও দুই বার এই মিটার চুরি হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও চোরদের রেখে যাওয়া ফোন নম্বরে কল দিয়েছিলাম। রিসিভ করেই বলে যে, এতো দেরি করে ফোন কেন দিলেন? আপনার জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই। বিকাশ নম্বরে দ্রুত টাকা পাঠান।’ এরপর আমি তাকে বলি যে, ভাই আমার মিটারই কেন বারবার চুরি করেন? তখন তারা বলে যে, মিটারের পাশে লাল কাপড় দিয়ে চিহ্ন করে রাখবেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে, এই মিটার এর আগেও চুরি করা হয়েছিলো। তারপর তাদের বিকাশ নম্বরে ২ হাজার টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছি। এরপর গুরুদাসপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম হারুনুর রশিদ জানান, এ যাবত উপজেলাব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ২২টি মিটার চুরি হয়েছে বলে জেনেছি। চুরির পর প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চোরেরা। বিষয়টি পুলিশেকে জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পুলিশও সবাইকে সতর্ক করছে।

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ওসি মোঃ মনোয়ারুজ্জামান বলেন, মিটার চোরচক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।

Share.
Exit mobile version