টেকনাফের পাহাড় অধ্যুষিত এলাকায় রোহিঙ্গা ডাকাতদের অপহরণ বাণিজ্য, মুক্তিপণ দাবী, খুন, রাহাজানির ভয়ে শত শত কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেনা বলে জানা গেছে।ফলে কৃষকদের শতশত একর জমি অনাবাদী  পড়ে রয়েছে বলে একাধিক  ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,টেকনাফের হ্নীলা  ইউনিয়ন, হোয়ায়ক্যং ইউনিয়ন, বাহারছড়া ইউনিয়ন পাহাড় অধ্যুষিত এলাকা। হ্নীলার ১ নং ওয়ার্ডের মরিচ্যা ঘোনা, রোজার ঘোনা, ৪ নংওয়ার্ডের পশ্চিম পানখালী, ভিলেইজার পাড়া, ৬ নং ওয়ার্ডের বড়লেচুয়াপ্রাং, ছোট লেচুয়া প্রাং, উলুচামরী,  ৭নংওয়ার্ডেরগাজী পাড়া, জুম্মাপাড়া, পশ্চিম আলীখালী, ৮নংওয়ার্ডের পশ্চিম  লেদা, নুরআলীপাড়া, শিয়াল্যা ঘোনা, ও ৯ নং ওয়ার্ডের মোচনী, শাল বাগান জাদীমুরাও পাশ্ববর্তী হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়াপাড়া, পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া, মিনাবাজার জুম্মা পাড়া, রইক্ষ্যং পুটিবনিয়া, চাকমা পাড়া, লাতুরী খোলা, পশ্চিম  কান্জর পাড়া এবং বাহারছড়ার হাজমপাড়া, নোয়াখালীয়াপাড়া জাহাজপুরাসহ বেশ কিছু  এলাকা পাহাড়ী জনপদ অধ্যুষিত এলাকা।

এখানকার কৃষকরা জানায়, প্রতি বছর এইসব এলাকা থেকে  মৌসুমি  সবজি চাষ করে পুরো উপজেলার সবজির চাহিদা মিটানো হত। একারণে টেকনাফের  বাজার গুলোতে সবজির দাম  সব সময়ই স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে  রোহিঙ্গারা আসার দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ঐ সমস্ত পাহাড়ি  জনপদ গুলো ডাকাত সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও স্থানীয় সন্ত্রাসী  মিলে  সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণদাবী,গুম,খুনের কারণে ওই এলাকাগুলোতে সবসময়ই আতংক বিরাজ করছে। এসব এলাকায় ডাকাতদের ভয়ে অনেক শিক্ষিত পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে বসবাস করছেন।কিন্তু গরীব কৃষকরা রয়েছে  এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে। তারা না পারছেন এলাকা ছাড়তে না পারছেন কৃষি আবাদি করতে। একারণে  এসব এলাকায় শতশত একর চাষাবাদ উপযুক্ত আবাদি  জমি পড়ে রয়েছে। যেই জমিগুলোতে এক সময় চাষাবাদ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করত। পাশাপাশি উপজেলার সিংহ ভাগ সবজির  চাহিদা নিশ্চিত  করত। এখন কৃষকরা রোহিঙ্গা ডাকাতদের ভয়ে জমি গুলো চাষাবাদ করতে না পারায় বাজারে সবজির দামে আগুন ধরেছে।

লাতুরী খোলা এলাকার কৃষক আলী হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা আসার আগেও তার সংসারে ভালো গৃহস্থালি ছিল,গোয়াল ভরা গরু,হাঁস মুরগী, ছাগল পালন এবং চার একর জমিতে চাষাবাদ করতাম। কিন্তু এখন ভয়ানক চাষাবাদ এরিয়া।  ছেলে সন্তানদের তো পাঠান না নিজেরাও অপহরণ  ভয়ে আসরের (বিকাল ৫ টার) আগেই বাড়িতে ঢুকে যান।
হাজমপাড়ার বাসিন্দা কৃষক সাহেদ বলেন, থাকতো সবজি চাষ, পাহাড়ের আশপাশের বিলগুলোতে ধান চাষও ছেড়ে দিয়েছি রোহিঙ্গা ডাকাতদের ভয়ে।

নোয়াখালীয়াপাড়ার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন,পড়াশোনাই পিছিয়ে পড়া এবসব এলকার উঠতি যুবকেরা তাদের বাপ দাদার সাথে কৃষি কাজ করতো। এখন ডাকাতদের ভয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। অর্থের অভাবে তারা মাদকেও জড়িয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে টেকনাফ উপজেলায় জনসংখ্যা পাঁচ  গুন বৃদ্ধি পাওয়ায়  সংশ্লিষ্ট বাজার গুলোতে সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য  সামগ্রীর দামও দিনদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে আসন্ন শীতকালেও  সবজি চাষাবাদও চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন  এলাকার শত শত কৃষক সমাজ।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ডাকাত প্রতিহতের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এবং স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। অপহরণের কোনো ঘটনা শোনার সাথে সাথে প্রশাসনের সহযোগিতা আমরা লোকজন নিয়ে অভিযান যায়। তিনি রোহিঙ্গা মুক্ত না হলে এসব এলাকায় লোকজন আতংকে দিনাতিপাত করবে বলে জানান।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী সময়ের আলোকে বলেন, উখিয়া টেকনাফের মানুষের ভাগ্য খারাপ, একদিকে সীমান্তবর্তী এলাকা অন্যদিকে পাহাড়। সীমান্তে মাদকের কারবার আর পাহাড়ে সন্ত্রাস এই দুটো আমাদেরকে গ্রাস করেছে। রোহিঙ্গা বিতাড়িত ছাড়া এখানে আর ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
Share.
Exit mobile version