অনলাইন ডেস্ক।। বছর চারেক আগে চীন থেকে শুরু হওয়া কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং লাখ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হন। এই মুহূর্তে সেখানকার উত্তরাঞ্চলের শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি চীনের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিপুল সংখ্যক অসুস্থ শিশু চিকিৎসার জন্য এসেছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

শিশুদের মধ্যে এই শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কারণ হিসেবে চীনে কোভিড-সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া ও শীতের মৌসুম-এই দুটি বিষয় উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থদের সংখ্যা কোভিডের মতো মারাত্মক নয় এবং সাম্প্রতিক ক্ষেত্রে কোন ‘নতুন বা অস্বাভাবিক’ রোগজীবাণুও পাওয়া যায়নি।

উদ্বেগ বাড়িয়েছে

কোভিড-বিধি পালনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরে বেইজিং-এ শিশুদের ফ্লু-জাতীয় রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ২২ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে চীনের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে মাস্ক পড়া এবং টিকা নেওয়ার বিষয়েও জোর দেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে আরও তথ্য চেয়ে পাঠনোর পর, চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রোগ নির্ধারণ ও যত্নের দিকে গভীর মনোযোগ দেয়া হচ্ছে।

পরে ২৩ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, চীন কোনো ‘অস্বাভাবিক বা নতুন রোগজীবাণু’ শনাক্ত করতে পারেনি এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা ‘একাধিক রোগজীবাণুর’ কারণে হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গত তিন বছরের তুলনায় অক্টোবর থেকে চীনের উত্তরাঞ্চলে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগ বেড়েছে’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং চীনের জাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মারিয়া ভ্যান করখভ বলেছেন, চীনে দুই বছরের কোভিড-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে শিশুরা এই ধরনের রোগজীবাণু থেকে দূরে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক অবস্থাকে আমরা প্রাক-মহামারী পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করতে বলেছি এবং এখন যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে তা ২০১৮-১৯ সালের মতো ব্যাপক নয়। ”

রবিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের মুখপাত্র মি ফেং জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুর কারণে, যার মধ্যে প্রধান হল ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণুর উপস্থিতি।

এই রোগ কি সংক্রামক?

চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি সংক্রামক বা সংক্রামক রোগ।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শ্বাসযন্ত্র-সংক্রান্ত রোগগুলি সংক্রামক। কাশি, হাঁচি ও কথা বলার মাধ্যমে এই রোগের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পালমোনারি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের প্রধান বেদ প্রকাশ বলছেন, কোভিডের সময় বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর চীনে এটাই প্রথম শীত, তাই সেখানকার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকবে।

একই সঙ্গে তিনি বলছেন, চীনে নতুন কোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেন পাওয়া যায়নি।

মাইকোপ্লাজমা, এএসভি কী?

চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সবই মাইক্রোস্কোপিক প্যাথোজেন বা প্যাথোজেন যা থেকে এই জাতীয় রোগ ছড়ায়।

চিকিৎসক বেদ প্রকাশ ব্যাখ্যা করেছেন যে মাইকোপ্লাজমা একটি ব্যাকটিরিয়াল জীবাণু এবং এটি বেশিরভাগ শিশুদের আক্রমণ করে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি গলা এবং শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস বা আরএসভি এক ধরণের ভাইরাস।

দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস-এর পালমোনারি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের প্রধান অনন্ত মোহনের মতে, এই ভাইরাসটি ‘আপার রেসপিরাটরি’, নাক এবং গলাকে প্রভাবিত করে। এটি সর্দি, কাশি এবং জ্বরেরও কারণ।

মাইকোপ্লাজমা এএসভি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা খুব সাধারণ রোগ, যা খুব গুরুতর না হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সেরেও যায়।

এর লক্ষণগুলো কী?

চিকিৎসকদের মতে এর বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ বলেই মনে হয়,

যেমন-গলা ব্যথা, কাশি, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর।

চিকিৎসকদের মতে, এটি কখনো কখনো আপনা আপনিই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় অ্যালার্জির ওষুধও দেওয়া হয়, কিন্তু নিউমোনিয়ার রূপ নিলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Share.
Exit mobile version