ঘটনাবহুল এই সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন এবং ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা, মব জাস্টিস, দাবি আদায়ে একের পর এক আন্দোলন, সড়কে চাঁদাবাজি, বাজার সিন্ডিকেট, সচিবালয়ে আনসারের অবরোধ কর্মসূচি, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়সহ নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয় ইউনূস সরকারকে।
এসব মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এখনও বড় চ্যালেঞ্জ বাজার সহনীয় করা। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে দু’মাসের জন্য মাঠে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। চলছে নিয়মিত বাজার তদারকি। তবে, এখনও পুরনো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ভোক্তা অধিকার।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন (জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন শৃঙ্খলা, নির্বাচন কমিশন, সংবিধান ও দুদক) এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সার্চ কমিটি।
এ ছাড়া ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নেওয়া উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাদ দেওয়া হয়েছে জাতীয় আট দিবস।
যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, সেইসঙ্গে আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ গঠন।
এছাড়া ব্যাংকগুলোকে বড় বড় ঋণখেলাপি ও লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দখল থেকে মুক্ত করে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি ও ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল, দায়মুক্তি আইন নামে পরিচিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন চলমান সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা, গণশুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত, বলপূর্বক গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর ও বিগত সরকারের আমলে সংগঠিত গুমের ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠনসহ বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে এই সরকার।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এখন রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ, দ্রুত সংস্কার শেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের সংলাপও করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সংলাপে দলগুলো এই সরকারের কাছে নির্বাচন ও সংস্কারের একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনও কোনো রোডম্যাপ দেয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী তা করা বেশ কঠিন। তারপরেও বেশ কিছু সমস্যা সমাধান হয়েছে। তবে যে বিশাল জনআকাঙ্ক্ষার ধারক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে এই সরকার, জনগণের সেই আস্থা ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।