✪ আরিফ আহমেদ মুন্না ➤ বাবুগঞ্জে যাত্রা শুরু করেছে ‘বীরপ্রতীক রতন শরীফ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া নতুনহাট এলাকায় এক আলোচনা সভা ও দোয়া-মোনাজাত মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার বীর প্রতীক রতন আলী শরীফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিমানবন্দর প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির উপজেলা সম্পাদক আরিফ আহমেদ মুন্না।
বীরপ্রতীক রতন আলী শরীফের ছেলে শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীরপ্রতীকের সহযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ হাওলাদার, রাকুদিয়া নতুন হাট জামে মসজিদের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বাবুল, মসজিদের খতিব হাফেজ মোহাম্মদ আল-আমিন, ইমাম হাফেজ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় সেখানে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আল-আমিন হাওলাদার, বিমানবন্দর প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খাঁন রানা প্রমুখ ছাড়াও রাকুদিয়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ইমাম, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বীরপ্রতীক রতন আলী শরীফ মুক্তিযুদ্ধকালীন একজন অন্যতম বেইজ কমান্ডার ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। তার জন্মস্থান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের করাচীতে বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। করাচীতে ছুটিতে থাকাকালে ঢাকায় স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে তিনি পালিয়ে দেশে চলে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। থানা থেকে তিনি ৩টি রাইফেল সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিয়ে সংগঠিত করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাবুগঞ্জে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের অধীনে তিনি যুদ্ধ শেষে ৩১২টি অস্ত্র সমর্পণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রতন আলী শরীফকে গ্রেপ্তারের জন্য মরিয়া পাকিস্তানি বাহিনী তাকে না পেয়ে তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে দেড় বছরের শিশুপুত্রকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে প্রায় একমাস আটকে রাখে। সন্তানকে জিম্মি করে তাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চাইলেও তিনি সন্তানের মায়া ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ না করে যুদ্ধ চালাতে থাকেন। যুদ্ধে হাতে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েও রণাঙ্গন ত্যাগ করেননি তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়, যা বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব। বীরপ্রতীক রতন শরীফ ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য হবে দেশপ্রেম, মানবসেবা, কল্যাণ ও সমাজের উন্নয়ন বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম।