বরিশাল অফিস:- চিকিৎসা সেবায় কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার পরেও দীর্ঘদিন থেকে অপচিকিৎসা দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় কথিত চিকিৎসক শামীম আকন। সে গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসা করে আসছিলো।
অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বরিশাল র্যাব-৮ এর চৌকস সদস্যরা ভূয়া চিকিৎসক শামীম আকনের ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় তার ক্লিনিক থেকে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি কথিত চিকিৎসক শামীমসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাব সদস্যরা।
সোমবার দুপুরে র্যাব-৮ এর বরিশাল অফিস থেকে প্রেরিত ই-মেইল বার্তায় এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাব-৮ এর সফল কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজও করে আসছে র্যাব সদস্যরা।
তারই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাতে র্যাব সদস্যরা বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া পৌর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঁচজন ভূয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়।
সূত্রমতে, র্যাব-৮ এর চৌসক একটি আভিযানিক দল ওই এলাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইয়াসিন খন্দকার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ এএইচএম ফাহাদ হোসেনকে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় হাতেনাতে ওই এলাকার জনতা ডেন্টাল কেয়ারের চিকিৎসক ও মালিক শামীম আকন, মোঃ ফাইজুল হক রানা, মডার্ন ডেন্টাল কেয়ারের চিকিৎসক মোঃ বাবুল হোসেন, মহিউদ্দিন আহমেদ পলাশ, জসিম উদ্দিন শাহীন ও শামীম আকনের ক্লিনিকের ভবন মালিক আব্দুল কাদের হাওলাদারকে আটক করা হয়।
আটককৃত পাঁচজন ভূয়া চিকিৎসক গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছে নিজেদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করে আসছিলো, যা খুবই বিপজ্জনক। আটকৃতরা তাদের স্বপক্ষে চিকিৎসার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পেরে ভ্রাম্যমান আদালতের সামনে তাদের দোষ স্বীকার করে।
পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট আটককৃত ভূয়া চিকিৎসক শামীম আকনকে দুই বছরের কারাদন্ড, মোঃ ফাইজুল হক রানা ও মহিউদ্দিন আহমেদ পলাশকে ছয় মাসের, জসিম উদ্দিন শাহীনকে চার মাস, মোঃ বাবুল হোসেনকে দুই মাসের কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। একইসাথে শামীম আকনকে ভবন ভাড়া দিয়ে উক্ত কাজে সহযোগিতা করার অভিযোগে আব্দুল কাদের হাওলাদারকে পনের হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন ভূয়া চিকিৎসকের চেম্বার ও ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কথিত চিকিৎসক শামীম আকন দীর্ঘদিন থেকে ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগানোর মতো কঠিন চিকিৎসা দিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে সে গাছগাছালির পাশাপাশি গরুর মূত্র চিকিৎসা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে এবং ইট দিয়ে ভাঙ্গা হাত বা পায়ে টানা দিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে আসছিলো। চিকিৎসা সেবায় তার কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকার পরেও সে গুরুত্বপূর্ণ রোগের চিকিৎসার নামে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। তার ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীকে উদ্ধার করে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আটক অন্যান্য ভূয়া চিকিৎসকরা দন্ত চিকিৎসাসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করে আসছিলো। র্যাব-৮ এর জনকল্যানমুখী এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও ই-মেইল বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।