আরিফ আহম্মেদ মুন্না, জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক:- সরকারি ভাতা প্রদানের বিনিময়ে অর্থ আদায়সহ সব ধরনের ভাতাবাণিজ্য বন্ধে সমাজসেবা কর্মকর্তার সহায়তায় অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল।

দু’দিন ধরে মাইকিং করে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে সহস্রধিক ভাতাপ্রার্থী হাজির করে জনসম্মুখে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইয়ের মাধ্যমে অনুকরণীয় এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। শনিবার উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় ২৩৭ জন নতুন ভাতাভোগী নির্বাচন করা হয়। বৃহস্পতিবার উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নে বাছাইয়ের মাধ্যমে বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো ওই উন্মুক্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন তিনি।

আগে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের মনোনীত লোকদের তালিকা করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে তাদের নামেই ভাতা চালু করতে বাধ্য করতেন। ফলে অনেক চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধেই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী নির্বাচনে সরাসরি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করা ছাড়াও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের।

এসব অনিয়ম দূর করতেই বাবুগঞ্জে মাইকিং করে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ওই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উন্মুক্ত যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাবুগঞ্জ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিনামূল্যের সরকারি বিভিন্ন ভাতা যাতে বিত্তশালীরা কিনে নিতে না পারে এবং যাতে প্রকৃত হকদার মানুষের হাতে পৌঁছানো যায় সেজন্যই উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সৎচিন্তা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুল হাসিব বলেন, ‘উন্মুক্তভাবে বাছাইয়ের জন্য আগে থেকেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা ছিল। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অসহযোগিতার কারণে এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়াটি অনেক উপজেলাতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের সততা ও নীতিগত অবস্থানের কারণে এবার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাবুগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়নে একই পদ্ধতিতে উন্মুক্তভাবে মোট ১ হাজার ৩৯০ জন নতুন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী বাছাই করে তাদের ভাতা প্রদান করা হবে বলে।’

গতকাল উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নে ওই উন্মুক্ত বাছাই কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তার সঙ্গে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ আজাদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুল হাসিব, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, মাধবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন হাওলাদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার হাফিজ আহমেদ স্বপন, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম ফিরোজ মোল্লা, সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আতিক, যুবলীগের দেহেরগতি ইউনিয়ন আহবায়ক নাজবীর হোসেন রচি, ইউপি সদস্য সেন্টু কাজী, ফাতেমা আক্তার লিপি প্রমুখসহ মাধবপাশা ইউপির সকল সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সমাজসেবা কর্মকর্তার এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। বাছাইয়ে আগত ভাতাপ্রার্থীরাও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার এ উন্মুক্ত বাছাইয়ের আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

Share.
Exit mobile version