বরিশাল অফিস:- জেলার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরের তাঁরাবাড়িতে উপ-মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী সতীর ৫১ পিঠের একটি শ্রীশ্রী উগ্রতাঁরা মন্দির প্রতিমা স্থাপন ও আরাধনার মধ্যদিয়ে বিপুলসংখ্যক ভক্ত অনুসারীদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে উদ্বোধণ করা হয়েছে।
পুজাঅর্চনার মধ্যদিয়ে প্রতিমা স্থাপন এবং মন্দিরের উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্দির পূর্ণ নির্মানে সহায়তাকারী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ডাঃ পিযুষ কান্তি দাস, মন্দিরের তত্বাবধায়ক দেবাশীষ, উপজেলা পুজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সহদেব কুমার দাসসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আগত পুরোহিতগণ ও ভক্তবৃন্দরা।
কয়েকশ’ বছরের পুরনো মন্দিরেরস্থানে নতুনভাবে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন ভবন তৈরি ও মূল্যবান পাথরের প্রতিমা স্থাপন এবং স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারে মুর্তি সাজানো হয়েছে। মন্দিরের পূর্ণ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
মন্দিরের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দুরত্বের শিকারপুর গ্রামই পুরানের সুগন্ধা। পীঠদেবী সুনন্দা এখানে উগ্রতাঁরা রূপে পুজিত। এটি ৫১ সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর নাসিকা পরেছিল। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। মহাদেবের তান্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তার সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ ৫১টি খন্ডে খন্ডিত করেন। সেই দেহখন্ডগুলো যে যে স্থানে পরেছিলো সেখানেই একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলা হয় সুগন্ধা সতীপীঠে দেবীর নাসিকা পরেছিলো। পীঠনির্ণয় ও তন্ত্রচূড়ামণি মতে এটি তৃতীয় সতীপীঠ। মতান্তরে শিবচরিত গ্রন্থে এটিকে ষষ্ঠ সতীপীঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, উজিরপুরের ওইস্থানে নাশিকাংশ (নাকের অংশ) পতিত হয়েছে। সেমতে কয়েকশ’ বছর যাবত দেশ-বিদেশের ভক্তরা শিকারপুর তাঁরাবাড়ির নাসিকা পীঠস্থানে নানা পূজা অর্চনা করে আসছে। আশির দশকে উজিরপুরের মাহার গ্রামের বাসিন্দা স্বর্গীয় বিপিন চন্দ্র দাসের পুত্র ডাঃ পিযুষ কান্তি দাস একদিন রাতে স্বপ্নে দেখেন, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মা তাঁরাকে নিয়ে সন্ধ্যা নদী থেকে উঠে এসে তাকে আদেশ করছেন, তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি এখানে আছি আমাকে প্রতিষ্ঠা করো। স্বপ্নের সেই আদেশপ্রাপ্ত হয়ে ডাঃ পিযুষ কান্তি দাস তাৎক্ষনিক ছুটে যান তাঁরাবাড়ি। সেখানে গিয়ে একজন প্রকৌশলী নিয়ে একটি নকশা করে মন্দিরের উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। তিনি সেই থেকেই মন্দিরটি দেখাশুনা করে আসছেন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও ডাঃ পিযুষ কান্তি দাস সম্মিলিতভাবে মন্দিরটি দৃষ্টিনন্দন করতে পূনঃনির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০২০ সালে এর কাজ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ণনির্মিত মন্দিরের উদ্বোধণ করা হয়েছে।