বরিশাল অফিস: যৌতুকের দাবিতে গর্ভধারিনী মাকে কুপিয়ে জখম করা জন্মদাতা পিতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে বুধবার দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সদ্য এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী পুত্র মোঃ জিহাদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোঃ জিহাদ বলেন, আমি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরে আলম ও তিমিরকাঠী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মারুফা আক্তার পপির বড় পুত্র। গত ২০ বছর পূর্বে দপদপিয়া ইউনিয়নের আইয়ুব আলী হাওলাদারের কন্যা মারুফা আক্তার পপির সাথে একই এলাকার আব্দুল ওহাব খানের পুত্র নুরে আলমের সাথে বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে আমি (জিহাদ) বড় ও জিসান ছোট। দীর্ঘদিন যাবৎ আমার বাবা নুরে আলম মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত। ২০১৫ সালে বরিশাল র‌্যাব-৮ এর হাতে সাত’শ বোতল ফেনসিডিলসহ তিনি আটক হন। মাদক আইনের ওই মামলায় আমার বাবা নুরে আলমের যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করে আদালতের বিচারক। উক্ত মামলায় তিনি এক বছরের কারাভোগ করার পর জামিনে বের হন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, জামিনে বের হওয়ার পরপরই আমার মা মারুফা আক্তার পপির কাছে ব্যবসা করার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করে বাবা নুরে আলম। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১৩ মার্চ বিকেলে ঘুমের মধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাকে বেধরক কুপিয়ে গুরুতর জখম করে বাবা নুরে আলম। পরে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় মাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি বলেন, যৌতুকের বিষয়টি নলছিটি থানা পুলিশকে একাধিকবার অবহিত করেছিলেন আমার মা মারুফা আক্তার পপি। থানা পুলিশ তিনবার বিষয়টি সমাধান করে দেন। এরপর আমি নিজেও ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে অভিযোগ দায়ের করি। পরে পুলিশ এসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। জিহাদ বলেন, আমার মাকে কুপিয়ে আহত করার পরপরই দাদী রেনু বেগম নলছিটি থানায় আমার মা মারুফা আক্তার পপি ও আমার মামা আল-মামুনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন আমার মা পরকীয়ায় আসক্ত। এ নিয়ে বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে আমার মামা আল মামুন আমার বাবা নুরেআলমকে পিটিয়ে আহত করে। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবা মাকে কুপিয়ে জখম করেছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যেখানে আমার মাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে, সেখানে আমার বাবা নুরে আলম কিভাবে আহত হলেন। এমনকি তিনি কোন হাসপাতালেও চিকিৎসা নেয়নি। বরং মাকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় নলছিটি থানা পুলিশ বাবাকে আটক করে নিয়ে যায়।

জিহাদ বলেন, আমার মা মারুফা আক্তার পপিকে যৌতুকের দাবীতে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় আমার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী হাওলাদার বাদি হয়ে আমার বাবা নুরে আলমের বিরুদ্ধে নলছিটি থানায় গত ১৪ মার্চ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আমার বাবার আত্মীয়-স্বজন ও তার অনুসারী মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে হুমকি প্রদান করে আসছে। ফলে আমরা চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। আমরা দুই ভাই আজ চরম অসহায় হয়ে পরেছি। আজ সন্তান হয়ে বাবার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে। মাকে বাঁচাতে এছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ নেই। আমার বাবা এতোটাই ছোট মনের মানুষ যে তিনি মাদক আর টাকা ছাড়া নিজের সন্তানকেও চিনেন না। আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় আমরা জানিনা। আমরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারি সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে জিহাদের খালা লাকী আক্তার ও মায়ের বান্ধবী ফারজানা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Exit mobile version