✪ আরিফ আহমেদ মুন্না, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) :- পটুয়াখালীর মহিপুর ফিশিং ঘাট থেকে ভাড়ায় চাঁদপুর যাবার কথা বলে কৌশলে অপহৃত একটি সামুদ্রিক মাছধরা ট্রলারে মাদকদ্রব্য আনতে টেকনাফ যাওয়ার পথে ট্রলারটি আটক করেছে আগরপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।

এসময় ওই ফিশিং ট্রলারের অপহৃত চালক সেলিম মাঝিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্ত মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য আল-আমিনকে আটক করেছে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আল-আমিন (৩৪) পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর গ্রামের মৃত আইনুদ্দিন মুসল্লীর ছেলে। এ ঘটনায় বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বরিশালের বাবুগঞ্জ, পটুয়াখালীর মহিপুর ও কক্সবাজারের টেকনাফ অঞ্চলের একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পরিবহন, পাইকারী বিক্রি ও সরবরাহ করে আসছিল। ওই মাদক সিন্ডিকেটের কলাপাড়া উপজেলার সদস্য হুমায়ুন মৃধা এবং আল-আমিন গত ১৯ এপ্রিল মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট থেকে এফ.বি তানিয়া নামের একটি সামুদ্রিক মাছধরা ট্রলার ভাড়া করে। চাঁদপুর থেকে বসতবাড়ি বদলের মালামাল আনার কথা বলে ২৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ট্রলারটি ভাড়া নেয় তারা।

চাঁদপুর যাবার কথা বলে মহিপুর থেকে ভাড়া করা ওই ফিশিং ট্রলারটি বরিশালের দপদপিয়া এলাকায় আসার পরে মাদক সিন্ডিকেটে আরও ২ সদস্য ট্রলারে উঠে অস্ত্রের মুখে ট্রলার চালক ও ইঞ্জিন মিস্ত্রিকে জিম্মি করে বাবুগঞ্জ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর লাশঘাটা নামক স্থানে নিয়ে আসে। শনিবার মধ্যরাতে লাশঘাটা থেকে মাদক সিন্ডিকেটের আরও ৩ সদস্য বাবুগঞ্জ উপজেলার চর উত্তরভূতেরদিয়া গ্রামের শহিদ পেয়াদা, বাবুল হাওলাদার ও ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম রানা ট্রলারে উঠে। এসময় তারা মাদক আনতে কক্সবাজারের টেকনাফ অভিমুখে রওনা হওয়ার জন্য ট্রলার চালককে নির্দেশ দেয়।

ফিশিং ট্রলারের চালক সেলিম মাঝি জানান, ঘটনাচক্রে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় তখন ইঞ্জিন চালু হচ্ছিল না। এসময় ইঞ্জিনমিস্ত্রি রাসেল হাওলাদার ব্যাটারি চার্জ করার কথা বলে কৌশলে ট্রলার থেকে নেমে পালিয়ে যায়। ইঞ্জিনমিস্ত্রি পালিয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রলার চালক সেলিম মাঝিকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে গভীর রাতে তাকে ফিশিং ট্রলার থেকে মারতে মারতে আরেকটা ট্রলারে উঠিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা। এদিকে পালিয়ে যাওয়া ইঞ্জিনমিস্ত্রি রাসেল পুলিশে খবর দিলে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমানে নেতৃত্বে অভিযানে নামে আগরপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ মানবেন্দ্র বালো সহ পুলিশ সদস্যরা।

সন্ধ্যা নদীতে পুলিশের ঘেরাওয়ের মুখে ফিশিং ট্রলারের অপহৃত চালককে বাবুগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এক দুর্গম চরে ফেলে পালিয়ে যায় মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এসময় হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় ট্রলার চালক সেলিম মাঝিকে উদ্ধার এবং অভিযান চালিয়ে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ও মামলার ২ নম্বর আসামী আল-আমিনকে গ্রেফতার করেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান। এ ঘটনায় ফিশিং ট্রলারের মালিক মহিপুরের শাহজাহান হাওলাদার বাদী হয়ে মহিপুর ও বাবুগঞ্জের মাদক সিন্ডিকেটের ৮ সদস্যসহ মোট ১১ জনের নামে বাবুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাবুগঞ্জ, মহিপুর ও কক্সবাজার অঞ্চলের একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মাদকদ্রব্য আনার জন্য ভাড়ায় চাঁদপুর যাবার কথা বলে ধাপ্পাবাজির মাধ্যমে ফিশিং ট্রলারটি মহিপুর থেকে অপহরণ করে বাবুগঞ্জ হয়ে টেকনাফ নিয়ে যাচ্ছিল। গ্রেফতারকৃত আল-আমিন ছাড়াও এই চক্রের পলাতক আসামী বাবুগঞ্জ থানাধানী চর উত্তরভূতেরদিয়া গ্রামের মৃত কাদের পেয়াদার ছেলে শহিদ পেয়াদা (৪০) ও মৃত এস্কান্দার হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদার (৪৫), ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের শাহে আলম চাপরাশির ছেলে সাইফুল ইসলাম রানা (২৫) এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানাধীন রব মৃধার ছেলে হুমায়ুন মৃধা (৪০) দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পরিবহন, বিক্রি ও সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বাবুগঞ্জ ও মহিপুরসহ বিভিন্ন থানায় ৫-৬টি করে মামলা রয়েছে। এদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত আছে।

Share.
Exit mobile version