ভাসমান নৌকা ওদের হোম কোয়ারেন্টিন

খোকন আহম্মেদ হীরা
আধুনিক সভ্যতায় মানুষ যেখানে উন্নত জীবন-যাপন করছে, পাশাপাশি নৌকায় সেই মানুষেরই জন্ম, বিয়ে, সংসার ও মৃত্যুর ব্যাতিক্রম চিত্রও রয়েছে। নদীতে নৌকায় ভেসে মাছ শিকার করে চলে তাদের সংগ্রামী জীবন-সংসার। যে নদীর পানিতে তাদের জীবন, সেখানেই তাদের মৃত্যুর ঘটনা। নিজস্ব কোন ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর এসব মানুষের লাশ নদীর পাড়েই দাফন করা হয়। ব্যাতিক্রম জীবন-যাপানে অভ্যস্ত এ মানুষগুলো মুসলমান হলেও মানতা স¤প্রদায় নামেই তারা পারিচিত। মাছ শিকার করে মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে এসব মানুষগুলো।

স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামেও এদের কারও কারও ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকুই বা ভোগ করেছেন তারা। শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ কোন মৌলিক চাহিদা জুটছে না তাদের ভাগ্যে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান কিংবা বিশুদ্ধ পানির সুবিধা। স্বাধীনতার প্রায় ৩৭বছর পর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পেলেও নাগরিক হিসেবে কতটুকুই বা সুবিধা ভোগ করতে পারেন এসব মানুষগুলো। তাদের ভোটে যারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন তারাই বা কতটুকু খোঁজ রেখেছেন এসব মানুষের।

প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্জা উপেক্ষা করে জীবন বাঁজি রেখে রাত দিন একাকার করে মাছ ধরে কোন মতে জীবন চলে এসব মানুষগুলোর। সচেতনতা ও সুযোগের অভাবে তাদের সন্তানগুলো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সামান্য অক্ষরজ্ঞানও অর্জন করতে পারে না তারা। বড় হয়ে তাদের বেঁছে নিতে হয় মা-বাবার মাছ ধরার পেশাকেই।

জেলার বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নৌকায় বসবাসকারী ২০টি মানতা পরিবারের সর্দার শহিদুল ইসলাম শহিদ জানান, বাড়ি ঘর না থাকায় নৌকায়ই তাদের ঘর বসতি। প্রাণঘাতি করেনা ভাইরাসের কারনে হাট-বাজার বন্ধ ও মানুষজন তেমন একটা বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় মাছ বিক্রি করা ছাড়া তারাও নৌকা থেকে ডাঙায় ওঠেন না। তিনি আরও জানান, জীবিকার প্রয়োজনে নৌকায় বসেই তারা সন্ধ্যা নদীতে বিভিন্ন মাছ শিকার করছেন। সবার শিকার করা মাছ একত্রিত করে তা নিয়ে দু’একজন সাজের বেলা বানারীপাড়ার ফেরী ঘাটে কিছু সময়ের জন্য নৌকা থেকে উঠে মাছগুলো বিক্রি করে আবার নৌকায় ফিরে গিয়ে অবস্থান নেয়।

সূত্রমতে, জেলার মেহেন্দিগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, বানারীপাড়া, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের কালকিনি, উপকুলীয় জেলা পটুয়াখালীর পানপট্টি, চরমনতাজ, গলাচিপা, কালাইয়া, বগা, বদনাতলী, উলানিয়াসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও মোহনাগুলোতে এ স¤প্রদায়ের কয়েক হাজার লোক নৌকায় বসবাস করছে। বাড়ি ঘর না থাকায় প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের কারনে এসব পরিবারগুলোর হোম কোয়ারেন্টাইন চলছে ভাসমান নৌকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের দুর্দীনে এ পর্যন্ত নৌকায় বসবাস করা এসব মানুষগুলোর মধ্যে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের অনুপ্রেরনায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুন নেত্রী শাকিলা ইসলাম এবং বরিশাল র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা পৃথকভাবে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া কোন জনপ্রতিনিধিরা নৌকায় বসবাস করা এসব পরিবারের খোঁজ খবর নেয়নি।

Share.
Exit mobile version