
মোঃ আহাদুল্লাহ সানা, সাতক্ষীরা।। সমাজ, পরিবার ও জীবনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে যারা স্বপ্ন বুনছেন নতুনভাবে এই অদম্য নারীদের সম্মান জানাতে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হলো রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৫ এর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন। জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে নারী ক্ষমতায়নের দৃঢ় বার্তা উচ্চারিত হয়। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের অসামান্য অবদান রাখা ৫ নারী এবং উপজেলা পর্যায়ে আরও ১ জন নারীকে দেওয়া হয় “শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা-২০২৫”।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় “নারী-কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা করিকরি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক বিষ্ণুপদ পাল। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মিজ্ আফরোজা আখতার।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক নাজমুন নাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর উপধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডবলু। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা জোহরা, মেডিকেল অফিসার ডা. সুমনা আইরিন, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, নবদিগন্ত-এর নির্বাহী পরিচালক বজলুর রহমান, সিডো’র নির্বাহী পরিচালক শ্যামল কুমারসহ সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা জরুরি। রোকেয়া দিবসের চেতনায় নারীর ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা সময়ের দাবি।
যারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অদম্য নারী সম্মাননা পেয়েছেন ৫টি ক্যাটাগরীর অনুযায়ী তারা হলেন, “ক” অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দ: কাটিয়া লস্করপাড়ার মো. মিজানুর রহমানের মেয়ে রায়হাতুল জান্নাত রিমি, “খ” শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী সাতক্ষীরা সদরের বাগানবাড়ীর শেখ মিজানুর রহমানের স্ত্রী গুলশান আরা বেগম, “গ” সফল জননী নারাই লাবসার কাজী সোহেল উদ্দীনের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বেগম, “ঘ” নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছে যে নারী শ্যামনগর উপজেলার পরানপুর গ্রামের মো: মাহাবুব রহমানের কন্যা মেরিনা খাতুন, “ঙ” সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী সাতক্ষীরা সদরের মিল বাজার এলাকার মো. আবুল কালাম শাহ’র কন্যা মোহিনী পারভীন। এছাড়াও সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পর্যায়ে পেয়েছেন খুকুমণি।
উল্লেখ্য, জেলা পর্যায়ে সম্মাননা পেয়েছেন ৫জন নারী এবং উপজেলা পর্যায়ে পেয়েছেন ৫জন নারী যার মধ্যে ৪জন নারী জেলা পর্যায়ের তালিকায় আছেন।
রায়হাতুল জান্নাত রিমি বলে, “পরিশ্রম আর দৃঢ় মনোবল থাকলে নারীরা যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারে। এই সম্মাননা আমাকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিল।”
গুলশান আরা বেগম বলে, “নারীর উন্নতির মূল চাবিকাঠি শিক্ষা। মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ করে তুলতে হবে।”
লুৎফুন্নেছা বেগম বলে, “সন্তানদের সুশিক্ষায় গড়ে তোলাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সমাজ আমাকে সম্মান জানানোয় আমি কৃতজ্ঞ।”
মেরিনা খাতুন বলে, “জীবনের কঠিনতম সময় আমাকে হার মানাতে পারেনি। নতুনভাবে দাঁড়িয়েছি নিজের সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে।”
মোহিনী পারভীন বলে, “সমাজের জন্য কাজ করা আমার নেশা ও দায়িত্ব। এই সম্মান আমাকে আরও উৎসাহিত করবে।”
খুকুমণি বলে, “আমি সাধারণ মানুষ, কিন্তু এই স্বীকৃতি আমাকে বিশ্বাস করায় নারীরা চাইলে সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, নারীর সক্ষমতা ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি নারীই অদম্য সুযোগ, সহায়তা ও পরিবার-সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের পথচলাকে সহজ করে দেয়।

