কামরুল হাসান সোহাগ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’র নামে করার দাবিতে বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে সরকারি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত কলেজ নামাকরন বাস্তবায়ন কমিটি’। একই সঙ্গে দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক স্মরকলিপিও দেওয়া হয়।
সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে সরকারি মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত কলেজ নামাকরন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের তথা বরিশালের কৃতি সন্তান মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত। তাঁর নামে বরিশাল সরকারি কলেজের নামকরণের দাবিতে কয়েক যুগ ধরে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করে আসছে। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকারি বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করে গেজেট নোটিফিকেশন জারি হওয়াটা এখন সময়ের দাবি। এটা বরিশালবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও দাবির স্বীকৃতিও বটে। তাই অবিলম্বে এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন অশ্বিনী কুমার দত্ত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু অশ্বিনী দত্তের বাসভবন। পশ্চাদৎপদ জনপদে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি নিজের অর্থব্যয়ে বরিশাল নগরীর কালিবাড়ি রোডে প্রথমে ১৮৮৪ সনে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন বিদ্যালয়’। পরবর্তিতে তিনি দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নিজ অর্থে ১৮৮৯ সনে তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রজমোহন কলেজ। এই মহাবিদ্যালয়টিকে এক সময়ে ‘অক্সফোর্ড অফ বেঙ্গল’ নামে বৃটিশ সরকার অভিহিত করতো। এই মহাবিদ্যালয়ে নিজে বিনা বেতনে শিক্ষকতাও করেছেন অশ্বিনী কুমার। ১৯২৩ সালে কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সেই থেকে কালীবাড়ি রোডে অবস্থিত তাঁর নিজস্ব বাসভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে।
পাকিস্তান সরকারের আমলে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনটি সরকার রিকিউজিশন করে এবং তিনি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে তার বাসভবনে ব্রজমোহন কলেজের কসমোপলিটান ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৬ সনে তার বাসভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘বরিশাল নৈশ মহাবিদ্যালয়’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নৈশ কলেজটিকে প্রথমে বরিশাল দিবা ও নৈশ কলেজে রূপান্তর করা হয়। পরে এটির নামাকরণ করা হয় ‘বরিশাল কলেজ’। কলেজটিকে ১৯৮৬ সনে জাতীয়করণ করা হলে কলেজটির নামাকরণ করা হয় ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’। ১৯৯০ সনে মহাত্মার ঐতিহাসিক বাসভবনটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ফেলা হয়।
আহ্বায়ক অ্যাড. মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, মহাত্মার বাসভবনে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বরিশালের অসাম্প্রদায়িক নাগরিকগণ কলেজটির নামকরণ ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার কলেজ’ করার দাবি জানালেও তৎকালীন মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক নেতারা সেই দাবি অগ্রাহ্য করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট একই দাবি করা করা হলে বিষয়টি তদন্ত করে গত ফেব্রæয়ারি মাসে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা সেই পদক্ষেপের চূড়ান্ত রূপ দেখতে চাই। এই বিষয়টি কেউ যাতে অন্যদিকে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য বরিশালের সর্স্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক (বীরপ্রতীক), সদস্য সচিব ও উদীচী জেলা সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, সমন্বয়কারী ও মহাত্মা অশ্বিনী কুমার স্মৃতি সংসদের সভাপতি স্নেহাংশু বিশ্বাস, কমিটির সদস্য ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ শাজেদা, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশান্ত ঘোষ, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সমকাল ব্যুরো প্রধান পুলক চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আজমল হোসেন লাবু, বাংলাদেশ গ্ররুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী, ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশালের সভাপতি নজরুল হক নিলু, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি অ্যাড. একে আজাদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার, বাসদ জেলা আহ্বায়ক, ইমরান হাবিব রুমন, সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী, বরিশাল সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলুসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’র নামে করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
[তথ্যসুত্রঃ দৈনিক ভোরের আলো]