রাঙা প্রভাত স্পোর্ট ডেস্কঃ
যেকোনো খেলার ক্ষেত্রে বিশ্বকাপ হচ্ছে চূড়ান্ত মর্যাদার আসর। সেখানে ফুটবল বিশ্বকাপকে লোকে ডাকে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলে। অর্থাৎ পৃথিবীতে এর চেয়ে জমজমাট আর বৃহত্তম ক্রীড়া আসর একটিও নেই। চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপ জিততে মুখিয়ে থাকে বিশ্বের শক্তিশালী জাতীয় দলগুলো। কিন্তু সবার ভাগ্য কি আর শিকে ছেঁড়ে! অতীতের পুসকাস, ক্রুইফ কিংবা হালের মেসি, রোনালদোর মতো তারকারাও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। সেখানে অনেকে আবার বিশ্বকাপ জিতেছেন একাধিকবার। তাঁদের মধ্যেও অনন্য হিসেবে ধরা হয়, যাঁরা খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে জিতেছেন এই মর্যাদাপূর্ণ ট্রফিটি। এই তালিকা খুবই ছোট, মাত্র তিনজনের আছে এমন অর্জন। তাঁদের নিয়েই এ লেখার অবতারণা।
১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ের পর ব্রাজিল দলের রাইটব্যাক কার্লোস আলবার্তোর সঙ্গে মারিও জাগালো
সবার প্রথমে যিনি এ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, তাঁর নাম মারিও জাগালো। ব্রাজিলের হয়ে খেলতেন লেফট উইং পজিশনে। ছোটখাটো গড়নের জাগালোর ছিলেন পরিশ্রমী খেলোয়াড়, সেই সঙ্গে ভালো টেকনিকও ছিল। লেফট উইং থেকে বল নিয়ে দৌড়ে ঢুকে যেতেন ডি-বক্সের মধ্যে। কোচরা মাঝেমধ্যে তাঁকে ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলাতেন। তিনি প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৫৮ সালে। তারপর আবার ১৯৬২-তে। দুবারই ব্রাজিল জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জাগালো। তারপর ব্রাজিলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে আসেন ১৯৭০ সালে। আর তখনই ইতিহাসের পাতায় নতুন একটি অধ্যায় যোগ করলেন তিনি। খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার পর সেবার কোচ হিসেবে জিতে নিলেন ১৯৭০ -এর জুলে রিমে ট্রফিটি। আর সেবারের ব্রাজিল দলকেও তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরার তকমা দেন ফুটবল বিশারদেরা। তবে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে খেলোয়াড় আর কোচ হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা জাগালোকে অনন্য হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন যে-কেউ! কমবয়সী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের তালিকায়ও তিনি দ্বিতীয়। তাঁর অর্জন এখানেই শেষ নয়। ১৯৯৪ -এর বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি। ফলে খেলোয়াড় ও স্টাফ হিসেবে মোট চারটি বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব নিয়ে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে নাম লেখালেন রেকর্ড বুকে। এর চেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জয়ের নজির আর কারও নেই। তাই ফিফা তাঁকে ‘অর্ডার অব মেরিট’ দিয়ে সম্মানিত করেছে।
একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বকাপের দুটি ট্রফিই জিতেছেন জাগালো
তালিকায় দ্বিতীয় নাম ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তাঁকে জার্মানরা ডাকে ‘কাইজার’ নামে, যার অর্থ সম্রাট। সত্যিকার অর্থেই জার্মান ফুটবলে তাঁর অবদান অনন্য। সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন ধরা হয় বেকেনবাওয়ারকে। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবে, পরবর্তী সময়ে খেলেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে। তৎকালীন পশ্চিম জার্মান দলের অবিচ্ছেদ্য সদস্য ছিলেন বেকেনবাওয়ার।
১৯৭৪ সালে অধিনায়ক ও ১৯৯০ সালে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করেছেন বেকেনবাওয়ার
১৯৭৪-এ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফের টোটাল ফুটবল খেলা হট ফেবারিট নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। আর সে দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন বেকেনবাওয়ার। জুলে রিমে ট্রফির মালিকানা ব্রাজিলের হয়ে যাওয়ার পর নতুন বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা প্রথম ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। জার্মান দলকে কোচিংয়ের দায়িত্ব নেন ১৯৮৪ সালে। ৮৬-এর বিশ্বকাপে প্রায় রেকর্ড বুকে জাগালোর পাশে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন, শুধু পারেননি ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার জন্য। তবে ১৯৯০ তে আর ভুল হয়নি। সেই আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতান পশ্চিম জার্মানিকে। জাগালোর পাশে জায়গা করে নিলেন বেকেনবাওয়ার। সঙ্গে নতুন আরেকটি রেকর্ড হলো তাঁর নামে- ক্যাপ্টেন ও কোচ হিসেবে দলকে বিশ্বকাপ জেতানো প্রথম ব্যক্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯৮ ও কোচ হিসেবে ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম
সর্বশেষ ব্যক্তিটি সদ্য বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্সের ক্যাপ্টেন ছিলেন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনে খেলতেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। খেলেছেন মার্শেই, জুভেন্টাসের মতো বড় বড় ক্লাবে। ছিলেন পরিশ্রমী খেলোয়াড়, সঙ্গে স্ট্যামিনা, প্রেসিং ও ট্যাকলিং -এর দক্ষতার কারণে সহজেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দিতে পারতেন। বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের অপরিহার্য একজন ছিলেন দেশম। ওপরের দুই কিংবদন্তির চেয়ে তাঁর খেলোয়াড়ি অর্জনও বেশি। বিশ্বকাপের সঙ্গে জিতেছেন ইউরো, ক্লাবের হয়ে ফ্রান্স ও ইতালির ঘরোয়া লিগ এবং দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন। ফ্রান্স ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১২ তে। তারপর ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে নিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ২০১৬ -এর ইউরোতে ফাইনালে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে হেরে যায় ফ্রান্স। অবশেষে শিরোপার দেখা মেলে ২০১৮ তে, ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হার।