সাব্বির ফকির, খুলনা :- খুলনা নগরীতে জমি জালিয়াতি চক্রের খপ্পরে নিঃশ হচ্ছে প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষ । এই চক্রটি একই জমি বার বার বিক্রি ও অ-প্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তার নামার তথ্য গোপন করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা । খালিশপুর বয়রা কলেজ বাউন্ডারী এলাকার মৃত শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের ওয়ারেশগন এ প্রতারনার মাধ্যমে তথ্য গোপন করে ১০ শতক জমি কবলা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
ডুমুরিয়া ভুমি অফিসের অভিযোগ সুত্রমতে,চকআসানখালী মৌজার জেএল৫৮ এর আরএস ৮৪ খতিয়ানের ১৩০১ দাগের ০.৫২ শতক জমির রেকর্ডীয় মালিক মৃত শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের ওয়ারেশ সুত্রে প্রাপ্ত হইয়া শেখ মনিরুজ্জামান ও তার তিন বোন মনিরা খাতুন,মেরিনা খাতুন ও শিরিনি খাতুন বিগত ইং ৬-৫-২০০২ সালে অপ্রত্যাহারযোগ্য আম মোক্তার দলিল ২৬০৯/২ । আম মোক্তার দলিল মুলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন খুলনা মহানগরীর কাশেম নগরের ২য় লেনের ইশরাত সুলতানা ও সহিদ শেখ । পরবর্তীতে উক্ত জমির কিছু অংশ খুলনা বাইপার্স সড়ক নির্মানে জেলা প্রশাসক অধিগ্রহন করেন । যার অধিগ্রহন কেস নং এস এ কেস ৬/২০০০-২০০১ । আমমোক্তার দলিল মূলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ইশরাত সুলতানা ও সহিদ শেখ খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভুমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপুরনের সরকারী অর্থ উত্তোলন করেন । পরবর্তীতে রেকর্ডীয় মালিক মৃত শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের নাম আর এস রের্কডে উল্লেখ থাকায় তার ওয়ারেশগন ঐ রেকর্ডের সূত্র ধরে আবার গত ইং২৫-২-২০২০ তারিখ দুই ব্যাক্তির নামে একটি পাওয়ার হস্তান্তর করেন । যার পাওয়ার নং ১৫৭৪ । পুর্বের সকল তথ্য গোপন করে প্রতারক চক্রের সদস্য শেখ মনিরুজ্জামান ও তার তিন বোন মনিরা খাতুন,মেরিনা খাতুন ও শিরিনি খাতুন গত ১১-১০-২০২০ ইং তারিখ ঐ ব্যাক্তিদের নামে ৫৮৭৭ ও ৫৮৭৮ নং কবলা দলিলে মোট ০৫–০৫}মোট ০.১০ শতক জমি হস্তান্তর করেন । ডুমুরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তথ্য গোপন করে একই জমি পুনরায় ভূয়া দলিল করার তথ্য জানতে পারেন পূর্ব মালিক । জমি জালিয়াতের এ ঘটনার বিষয়ে ডুমুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । অভিযোগে বিবাদী করা হয় ৪নং কয়রার আনসার আলী মোল্ল্যার পুত্র মোঃ ইমরান ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বড়পড়ী গ্রামের আঃ কাদের ফকিরের পুত্র মোঃ আব্দুর সবুরকে ।
বাদী অভিযোগে চকআসানখালী মৌজার জেএল৫৮ এর আরএস ৮৪ খতিয়ানের ১৩০১ দাগের ০.১০ একর সম্পত্তির নামপত্তন কেস বন্ধ রাখার আবেদন করেন । আবেদনের অনুলিপি দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডুমুরিয়া ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা থুকরা,ডুমুরিয়া খুলনাকে ।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভুমি) সঞ্জীব দাশ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন,তথ্য গোপন করে জাল রেজিষ্ট্র করা ৫৮৭৭ ও ৫৮৭৮ নং কবলা দলিল যাতে কোনভাবে নাম পত্তন করতে না পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে । এই জালিয়াত চক্রের সাথে যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে । ইতিমধ্য সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কোন কবলা দলিল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা হলে তার নাম পত্তন কেস প্রহন করা না হয় । বর্তমান সরকার ভুমি সেবা ডিজিটাল করায় ভুমি মালিকরা সহজেই কোনরুপ হয়রানী ছাড়াই সেবা গ্রহন করছেন । কোন ভুমি অফিসে অনিয়ম হলে সেবা প্রত্যাশীরা যাতে সহজে অভিযোগ দিতে পারে তার জন্য আমরা প্রতিটা ইউনিয়ম ভুমি অফিসে আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের এবং সহকারী কমিশনার(ভুমি)র মোবাইল নান্বার ইউনিয়ন ভুমি অফিসে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে । কোন ভুয়া বা জাল দলিল দ্বারা জালিয়াত চক্র ভুমি অফিসকে ব্যাবহার করতে না পারে সেজন্য সর্তকতা মূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে ।
সম্প্রতি সরকার ভুমি মালিকদের ১৭ ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি মন্ত্রনালয় সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প গ্রহন করেছে । এসব সেবা পেতে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমেই মিলবে সেই। সেবাগুলো হচ্ছে- ই-মিউটেশন, রিভিউ ও আপিল মামলা ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, রেন্ট সার্টিফিকেট মামলা ব্যবস্থাপনা, মিউটেটেড খতিয়ান, ডিজিটাল ল্যান্ড রেকর্ড, মৌজা ম্যাপ ডেলিভারি সিস্টেম, মিস মামলা ব্যবস্থাপনা, কৃষি ও অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানি মামলা তথ্য ব্যবস্থাপনা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, বালুমহাল ব্যবস্থাপনা, চা-বাগান ব্যবস্থাপনা, ভিপি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ বাজেট ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
উল্লেখঃ জমি দখল,জমি জালিয়াত ও হিন্দুর সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল সাথে ঐ অঞ্চলের একাধিক চিহৃিত ভুমিদস্যু ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি ভুমি দখল ও ভুমি জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত । এই চক্র দির্ঘদিন যাবত সাধারন মানুষের সাথে জমি ক্রয় বিক্রয়ের নামে প্রতারনা করে আসছে। এই জমি জালিয়াত চক্রের হোতাদের মূখোষ উন্মোচন করা তাদের বিরুদ্ধ আইনি ব্যাবস্থা নেয়া না হলে প্রতিনিয়ত নিঃশ হবে সাধারন মানুষ ।