বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
শীতে নিউমোনিয়া রোগীদের ঝুঁকি বাড়াবে করোনা
রাঙা প্রভাত ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই অনেকটা জোরালো হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপ। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ। ডেঙ্গুর মূল মৌসুমে এর তেমন প্রকোপ দেখা না গেলেও প্রায় শেষ সময়ে এসে বেড়ে গেছে। আবার প্রতিবারই শীত মৌসুমে জেঁকে বসে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগ। নিউমোনিয়ার সমস্যা বড় হয়ে ওঠে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। এতে মৃত্যুও ঘটে। বিশেষজ্ঞরা শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী হয় কি না হয় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার পাশাপাশি এবার করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু ও ফ্লুর প্রকোপ নিয়ে এক ধরনের জটিল অবস্থার আশঙ্কা করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কভিড ছাড়াও অন্য করোনাভাইরাসগুলো সাধারণত শীতকালে একটু বেশি দেখা যায়। ফলে এবার কভিডের সঙ্গে ওই করোনাভাইরাসের সংক্রমণও থাকার আশঙ্কা রয়েছে প্রতিবছরের মতো। এর সঙ্গে ডেঙ্গু বেড়ে গেছে কিছুদিন ধরে বৃষ্টির কারণে। এডিস মশা এই বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি থেকে জন্ম নেওয়ার পরিবেশ পেয়েছে। ফলে এখন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এ ছাড়া শীতকালে অ্যাজমা, নিউমোনিয়ার সমস্যাও বেড়ে যায়। সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম হলেও তা দীর্ঘায়িত হতে পারে অনেক সময়।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, শিশুদের মধ্যে করোনা এখনো খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও আমাদের দেশে কিন্তু শীতকালে শিশু ও বয়স্করা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের জন্য করোনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থাৎ যদি কেউ আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পরে করোনায় আক্রান্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি থাকবে। এ ক্ষেত্রে শিশুরাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। ফলে যেসব পরিবারে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন সেই পরিবারগুলোতে অন্যদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে শীত ঘিরে।
যদিও দেশে দেশে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আগের তুলনায় অনেকটা কমতির দিকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বৈশ্বিক পরিস্থিতি তালিকায় তেমন চিত্রই দেওয়া হয়েছে। ডাব্লিউএইচওর সর্বশেষ তালিকা অনুসারে মোট শনাক্ত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল ১৮তম, দৈনিক শনাক্ত সূচকে ৪২তম, মোট মৃত্যুর সূচকে ৩১তম ও দৈনিক মৃত্যু সূচকে ৩৩তম। এক মাস আগের তুলনায় এই চার সূচকেই উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশে। তবে গত এক মাসে ইউরোপের কয়েকটি দেশে দৈনিক সংক্রমণ বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রভাব এই তালিকায় পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তবে স্থানীয় হিসাবে গত এক মাসে অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ধীরে ধীরে কিছু কমছে, আবার বাড়ছে। শনাক্ত ও মৃত্যু এখনো একটানা নিচের দিকে নামছে না; একদিন কম তো আরেক দিন বেশি। যে পরিস্থিতি বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলছে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের খালি সিটের প্রতি। বিশেষ করে সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারের হিসাব অনুসারে দেশে মোট শনাক্তকৃত চার লাখ এক হাজার ৫৮৬ জন শনাক্তকৃত রোগীর মধ্যে তিন লাখ ১৮ হাজার ১২৩ জন সুস্থ হয়ে যাওয়া এবং পাঁচ হাজার ৮৩৮ জন মারা যাওয়ার পর অ্যাক্টিভ পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ বা দুই হাজার ৬৩৮ জন হাসপাতালে রয়েছে। বাকি পজিটিভ সবাই বাড়িতে আছে। অন্যদিকে হাসপাতালে কভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত মোট ১২ হাজার ২৯৪টি বেডের ৭৯ শতাংশই শূন্য রয়েছে। যার আড়ালে স্বস্তিদায়ক চিত্র পাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে এবার করোনা মহামারি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিলেও গত বছর দেশের মানুষ ও স্বাস্থ্য বিভাগের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল ডেঙ্গু। এবার মূল ডেঙ্গু মৌসুমে করোনার দাপটের আড়ালে ডেঙ্গু অনেকটা চাপা পড়লেও এখন আবার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে তিনজনের মৃত্যুর তথ্যও রয়েছে। যাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল হাসপাতালে এবং ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিল ৯ জন। গত মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দৈনিক ভর্তি ছিল তিন-চারজনের মধ্যে আর মোট ভর্তির হিসাবে ছিল সাত-আটজনের মধ্যে। চিকিৎসকরাও ডেঙ্গু রোগী বাড়ার কথা বলছেন।