নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে বিজয় ফুল উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রদান নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত দুই বছর যাবত বিজয়ে মাসে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজয় ফুল উৎসব নামের এক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় হিসেবে ২হাজার করে টাকা প্রদান করে আসছে সরকার। কিন্তু গত ১৯সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিজয় ফুল উৎসবের খরচ বাবদ কোন টাকাই চলতি বছর উপজেলার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত পায়নি।
সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখা থেকে ১৯সালের নভেম্ববরে সিনিয়র সহকারি সচিব ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে (স্মারক নম্বর ৩৭.০০.০০০০.০৬৪.৯৯.০০৫.১৯.২২৩) উল্লেখ্য করা হয় যে, বিজয় ফুল উৎসব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার ব্যয় নির্বাহের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে ২হাজার টাকা করে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী অফিসারের অনুক’লে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ থেকে বরাদ্দ প্রদান করা হলো। অব্যয়িত অর্থ ৩০জুনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে। কিন্তু সেই অর্থ জেলার অন্যান্য উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যেই বিজয় ফুল উৎসব সংক্রান্ত অর্থ প্রদান করা হলেও রাণীনগর উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই অর্থ প্রদান করা হয়নি। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বিজয় ফুল উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে বিজয় ফুল উৎসব অনুষ্ঠানের ব্যয় হিসেবে রাণীনগর উপজেলার ১শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২লাখ টাকা, ৩১টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৪টি কলেজের জন্য ৭০হাজার টাকা, ৭টি মাদ্রাসার জন্য ১৪হাজার ও ২টি কারিগরি কলেজের জন্য ৪হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুক’লে। কিন্তু চলতি বছর শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানকে কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে এই অর্থ প্রদান করেননি বলে জানা গেছে।
রাণীনগর শের-এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোফাখ্খার হোসেন খাঁন পথিক বলেন শুধু বিজয় ফুল উৎসবই নয় উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা বিষয়ক প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে আমার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করিয়ে আসছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি টাকাও পাইনি। এমনকি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের কোন পুরস্কারও দেওয়া হয় না। অথচ প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর হাজার হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই অর্থগুলো কোথায় যায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান আমরা জেনেছি জেলার অন্যান্য উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বিজয় ফুল উৎসব উদযাপনের ব্যয় হিসেবে ২হাজার করে টাকা পেয়েছেন। বছর শেষ হতে যাচ্ছে অথচ আমরা এখন এই বিষয়ে কিছুই জানি না যে আমাদের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিনা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার শামছুজ্জামান বলেন আমার ১শতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজয় ফুল উৎসব উদযাপনের ব্যয় হিসেবে কোন অর্থ বরাদ্দ এখন পর্যন্ত পাইনি। নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এসেছে কিনা তাও আমার জানা নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জলিল বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত আমাকে বিজয় ফুল উৎসব বাবদ কোন অর্থ প্রদান করেননি। যার কারণে আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেও সেই অর্থ এখন পর্যন্ত দিতে পারিনি। অর্থ নির্বাহী কর্মকর্তার অনুক’লে এসেছে নাকি সেই বিষয়টিও আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন বিষয়টি দেখতে হবে। আমি ছুটিতে আছি। ছুটি শেষে অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখবো