রাঙা প্রভাত ডেস্ক।। বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলো লিজের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ওই মিলগুলো চালু করা সম্ভব হলে অবসায়নকৃত শ্রমিকদের মধ্যে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিকরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। খবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রের।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেবে তাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। তার পর তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হবে।
প্রথম ধাপে যতগুলো সম্ভব হবে, ততগুলো মিল ইজারা দেওয়া হবে। এর আগে বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো পুনরায় চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই সুপারিশের অগ্রগতি অবহিত করতে গিয়ে বলা হয়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম আবার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মিল চালুর জন্য লিজ বা ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুসরণীয় মৌল নীতি ও কর্মপরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মাদ আবুল কালাম এনডিসি আমাদের সময়কে বলেন, লিজ পদ্ধতিতে চালু করা হবে বন্ধ পাটকল। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল খুলনা শিল্পনগরীর ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুটমিল লিজ নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। ইতোমধ্যে সে দেশের প্রতিনিধি দল জুটমিল দুটি পরিদর্শন করেছেন। শ্রমিকদের বেকারত্ব নিরসনে সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার প্রাথমিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো ফের উৎপাদনে ফেরাতে চারটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল। এগুলো হলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ, জিটুজি এবং ইজারা। তবে কম সময় এবং দ্রুত উৎপাদন ও কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে ইজারাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইজারা দেওয়া কারখানাগুলো বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ব্যবস্থাপনা, লাভ-লোকসানে কোনো অংশীদারি থাকবে না। তবে ইজারা দেওয়ার পর সরকারের দেওয়া শর্ত পালন করছে কিনা তদারকি করবে সংস্থা। এ ছাড়া অগ্রাধিকার হিসেবে কর্মচ্যুত শ্রমিককে ওই কারখানায় নিয়োগ দিতে বাধ্য করা হবে। এ জন্য কঠোর নজরদারি করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ইচ্ছা সব পাটকল ফের চালু করা। তবে সব কারখানা চালু করার বিষয়টি নির্ভর করছে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের সাড়া কেমন পাওয়া যায় তার ওপর। অবশ্য বন্ধ হওয়া পাটকলগুলোর সব শ্রমিককে যেন ফের কাজে ফিরিয়ে আনা যায়, সে জন্য কারখানাগুলো চালু করা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে।
সরকারি পাটকল বন্ধ হলেও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের হাত ধরে করোনাকালেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ, যেখানে তৈরি পোশাক, চামড়া, চামড়াজাত পণ্যসহ অন্য অনেক খাতের রপ্তানি কমেছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে পাটশিল্পকে লাভজনক ও বেসরকারিকরণ বন্ধ করার কথা বলেছিল। সরকার গঠনের পর তারা বন্ধ দুই পাটকল চালু করে। বেসরকারিকরণ করা তিন পাটকল ফিরিয়ে এনে আবার চালু করে। এ জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। তবে লাভের লাভ কিছু হয়নি। ২০১০-১১ অর্থবছরেই ১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা মুনাফার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান হচ্ছে। গত ১১ বছরেই ৪ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। তার মধ্যে সর্বশেষ পাঁচ বছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা।
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৫ পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করে সরকার। তখন পাটকলগুলোয় বদলি শ্রমিক ছিলেন ২৩ হাজার ৮৪২ জন। দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যাও কম ছিল না, ৮ হাজার ৪৬৩ জন।
প্রসঙ্গত, বিজেএমসির আওতায় গত জুন পর্যন্ত ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি জুট কারখানা।
সোনালি আঁশে সমৃদ্ধ অর্থনীতির স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাকালে বিজেএমসির আওতায় ৭০টিরও বেশি পাটকল ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানের কারণে মিলসংখ্যা কমতে কমতে ২৫-এ গিয়ে ঠেকে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসানে ছিল বিজেএমসি।