বিশেষ প্রতিনিধি।।  পাসপোর্ট ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম চালু করে ‘ই-পাসপোর্ট’ বা ‘ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট’। ঢাকা আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন জমা পড়ে ৩ হাজারের বেশি আবেদন। এর মধ্যে অন্তত ৮শ আবেদনে কোনো না কোনো ত্রুটি থাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে যে জনবল ও জায়গা রয়েছে, তাতে দিনে সর্বোচ্চ ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ জনকে মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব।

কর্মকর্তাবৃন্দ বলছেন, অবকাঠামো ও লোকবল সংকটের কারণে নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট জমা ও বিতরণ করতে পারছে না ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন করতে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকের বিদেশযাত্রাও বাতিল হচ্ছে। রোগী ও ব্যবসায়ীরা জরুরি প্রয়োজনে সময়মতো দেশের বাইরে যেতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে আগারগাঁও অফিসে দিনে জমা পড়ে ৩ হাজারের অধিক আবেদন। এত মানুষ দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা সেখানে নেই। এ ছাড়া এই ৩ হাজারের সঙ্গে থাকেন আত্মীয়স্বজনও। এ ছাড়া পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতেও একই পরিমাণ লোক আসেন। আবার ভুল তথ্য সংশোধন চেয়েও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক আসেন। প্রতিনিয়ত এ বিপুলসংখ্যক মানুষ ভিড় করছেন। পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে তিলধারণের ঠাঁই থাকে না। এত মানুষের সেবা দেওয়ার মতো জনবল ও অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এত ভিড় দেখে অনেকে আবার দালালচক্রের ওপর ভরসা করছেন।
কর্মকর্তাবৃন্দ আরো বলেন, এত আবেদন সঠিক সময়ের মধ্যে সমাধান করে সেবা দিতে চাইলে শুধু ঢাকাতেই জরুরি ভিত্তিতে আরও অন্তত ১০টি অফিস দরকার। এ ছাড়া আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের জনবলও বাড়ানো দরকার। মাসে অন্তত ৫ লাখ মানুষের হাতে পাসপোর্ট তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অফিস (ডিআইপি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে ৯০০ জনবল চেয়ে আবেদন করেছে। এই জনবল নিয়োগ হলে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে বলে মনে করছেন ডিআইপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকায় পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া অনেকের সঙ্গে কথা হয় আমাদের সময়ের এই প্রতিবেদকের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার পর এক মাসের বেশি সময় লাগে কাগজপত্র জমা দেওয়ার সিরিয়াল পেতে। জমা দিতে গিয়ে ভিড় ঠেলে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করে আবেদন জমা দিতে হয়। লাইনে দাঁড়াতে হয় পাসপোর্ট আনতে গিয়েও। এ ছাড়া ছোটখাটো ভুলের কারণে ভোগান্তি তো আছেই।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চান। জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট দরকার। অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু বায়োমেট্রিকের জন্য আগামী ২৫ আগস্ট তারিখ পেয়েছেন। এখন ধরনা দিচ্ছেন আগারগাঁওয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে (ডিআইপি) শীর্ষকর্তাদের কাছে। কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে দ্রুত পাসপোর্ট পেতে সফল হলেও বেশির ভাগকেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। অনেকে দালালদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। সুযোগ বুঝে তাদের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। একদম পাসপোর্ট অফিসের ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে তারা সেবাপ্রত্যাশীদের নিজেদের জালে জড়ানোর চেষ্টা করেন।

ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিদিন ২ হাজার ৫৬০টি পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় একই পরিমাণ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। একেকটি পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারি দিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। যার কারণে পাসপোর্ট জমা ও ডেলিভারিতে ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ আবেদন জমা পড়ছে, সে অনুযায়ী সেবা দিতে চাইলে শুধু ঢাকাতেই আরও অন্তত ১০টি অফিস দরকার। তবে আমাদের সাধ্যমতো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ব্যাংক, বিআরসি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের কাজ রয়েছে। কোনো কারণে কোনো একটি সংস্থার সার্ভারে ঝামেলা হলে পাসপোর্ট অফিসের চলমান কাজে বিঘ্ন ঘটে। সেবা পেতে দেরি হলে শুধু পাসপোর্ট অফিসের দোষ হচ্ছে। অনেক সময় পুলিশের প্রতিবেদন পেতে দেরি হয়। প্রতিটি আবেদনের জন্য বায়োমেট্রিক করতে হয়। একেকটি বায়োমেট্রিকের জন্য ন্যূনতম ৫ মিনিট সময় লাগে। এতে আবেদনকারীকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

Share.
Exit mobile version