বিশেষ প্রতিনিধি।। বান্দরবানের তুমরু সীমান্তের জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার সেল হামলায় এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক কিশোরের পা উড়ে গেছে। এ ঘটনার পর আতঙ্কে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে।

জানা গেছে, বিজিবি সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাড়িয়েছে টহল।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ৩৪ নম্বর পিলারের কাছে কোনার পাড়ার জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবিরে চারটি মর্টার সেল এসে পড়ে। এগুলোর মধ‍্যে একটি বিস্ফোরিত হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৭ বছরের কিশোর মোহাম্মদ ইকবাল নিহত হয়। এছাড়া গোলার আঘাতে আহত হযন পাঁচজন। স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নিহত রোহিঙ্গা কিশোর মো: ইকবাল জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মনির আহমেদের ছেলে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম পাওয়া যায়নি।

এদিকে এ ঘটনার পর আতঙ্কে রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। আতঙ্কে বন্ধ করা দেয়া হয় তুমব্রু বাজারের দোকানপাট। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে মায়ানমারের সেনাবাহিনী বিমান থেকে মর্টার হামলা চালায়। জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সরদার (মাঝি) দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন দুপুরে মাইন বিস্ফোরণে সীমান্তে এক যুবক আহত হওয়ার পর রাত ৮টার দিকে ৩৪ নম্বর পিলারের কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি গোলা এসে পড়ে। পরে আরো তিনটি গোলা সেখানে পড়ে। এদের মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়ে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, কদিন শান্ত থাকার পর হঠাৎ করে শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ও জিরো লাইনে বেশ কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করে। এছাড়া গুলিবর্ষণের শব্দ ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে। সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন ও রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের কাছে জিরো লাইনে গরু আনতে গেলে তুমব্রু হেডম‍্যান পাড়ার যুবক উনুসাই তঞ্চঙ্গ‍্যা (২২) মাইন বিস্ফোরণে তার পা উড়ে যায়। বিস্ফোরণে একটি গরুও সেখানে মারা যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

নাইক্ষ্যংছুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।

উল্লেখ্য, গত এক মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ঘুনধুম রেজু আমতলি সহ ৩৯ নম্বর পিলার থেকে শুরু করে ৪০ নম্বর পিলার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে দেশটির সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিপির মধ্যে ব্যাপক সংঘটিত চলছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মায়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া এ পর্যন্ত ১২টি মর্টার সেল এসে পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে।

Share.
Exit mobile version